স্কলারশিপ সাক্ষাৎকারে যেভাবে সফল হবেন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

স্কলারশিপ নিয়ে পড়ালেখা করার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। তাই এই ধরণের প্রোগ্রামগুলোতে অনেক বেশি প্রতিযোগিতা থাকতে দেখা যায়। যতজন প্রার্থী আবেদন করে তার থেকে গুটিকয়েক শিক্ষার্থীকে বাচাই করে নেওয়া হয়। বাচাইয়ের চুড়ান্ত পর্ব হলো আপনাকে সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো। অর্থাৎ তখন আপনি স্কলারশিপের চূড়ান্ত প্রার্থী।

স্কলারশিপ সাক্ষাৎকারে যেভাবে সফল হবেন এবং এই স্কলারশিপ কীভাবে আপনাকে আপনার একাডেমিক এবং ক্যারিয়ারের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে তা জানতে তারা আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। স্কলারশিপের এই চুড়ান্ত পর্ব নিয়ে মোটামুটি সবাই অনেক চিন্তিত থাকে। সাক্ষাৎকারে কী ধরণের প্রশ্ন করা হবে, কীভাবে উত্তর দেওয়া উচিত এই ধরণের নানান চিন্তা তখন শিক্ষার্থীদের মনে ঘুরপাক খায়। তাই আজকে আমরা জানবো স্কলারশিপ সাক্ষাৎকারের সর্বাদিক পরিচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন: প্রতিটি সাক্ষাৎকারের একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো “আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন?” অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না নিজের সম্পর্কে কী বলবো এবং কতটুকু বলা সামঞ্জস্যপূর্ণ৷ এক গবেষণায় দেখা যায় যে, নিজের সম্পর্কে কমপক্ষে ১ মিনিটের বেশি সময় ধরে বলাটা যুক্তিযুক্ত। কেননা আপনি নিজের সম্পর্কে কতটুকু বলতে পারেন সেটা তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত আপনার জীবনবৃত্তান্ত ও পড়াশোনা সম্পর্কে খুব বেশি না বলা উচিত। কারণ সাক্ষাৎকার কমিটি ইতিমধ্যেই জানেন যে আপনি কী করেছেন। পরবর্তীতে নিজের সম্পর্কে বিভিন্ন আকর্ষণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরুন। আপনি সবচেয়ে বেশি দক্ষ ও যত্নশীল এমন কোনো বিষয় সম্পর্কেও ইঙ্গিত দিতে পারেন। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে নিজেকে আলাদা করার জন্য এটি একটি অন্যতম সুযোগ।

যেমন ‘আমার নাম এমা এবং আমি বর্তমানে কার্লসবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র। সেখানে আমি স্পেনীয় এবং ম্যান্ডারিনের এই দুটো ভাষায় পড়াশোনা করছি৷ আমি সাহিত্য নিয়ে পড়তে ও লিখতে খুব ভালোবাসি। সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা অটুট রাখতে আমি নিজস্ব সাহিত্য পত্রিকা চালু করেছি।’ লক্ষ্য করুন এখানে এমা তার মূল আগ্রহ, ভাষা এবং সাহিত্যের দিকে ইঙ্গিত করছে। অর্থাৎ এই প্রশ্নের প্রতিউত্তরে নিজের বিশেষ কোনো প্রতিভাকে তুলে ধরা উচিত।

আপনার শক্তি বা ক্ষমতা সম্পর্কে বলুন: এটি সাক্ষাৎকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। কারণ যখন তারা আপনার শক্তি বা ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চাইবে, তখন আপনি সহজেই নিজের প্রশংসা করতে পারবেন। কিন্তু সেটা তাদের কাছে প্রমাণ করাটাই মূল কাজ, যা সেই স্বল্প সময়ে বোঝানো বেশ কঠিন। তাই তখন এমন কিছু উপস্থাপন করুন, যাতে আপনার শক্তি বা ক্ষমতা প্রদর্শন করার মতো পর্যাপ্ত উদাহরণ রয়েছে।

আপনার দুর্বলতাগুলো সম্পর্কে বলুন: স্বাক্ষাৎকার কমিটি অবশ্যই আপনার দূর্বলতা সম্পর্কে জানতে চাইবে। মূলত আপনি আপনার ভুলগুলোকে মোকাবেলা করতে এবং সেগুলো থেকে কিছু শিখেন কিনা তা নির্ধারণ করার জন্যই এই প্রশ্নটি তৈরি করা হয়েছে। তাই অত্যন্ত সততার সাথে এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে হবে।

‘আমার রাগ বেশি’ বা ‘আমি অগোছালো’- এই ধরণের স্থির বা জেনেরিক দুর্বলতাগুলো না বলে এমন একটি বিষয়কে উপস্থাপন করুন, যা আপনি দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং উন্নতির চেষ্টা করেছেন। সাক্ষাৎকারকারীদের বোঝাতে চান যে আপনার দুর্বলতা আপনাকে লক্ষ্যার্জনে বাঁধা দেবে না।

আপনার আদর্শ ব্যক্তিত্ব কে: প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনেই কোনো না কোনো ভূমিকা মডেল থাকে। সাধারণত যে যেই পেশা বা সংস্কৃতিকে ভালোবাসে সে সেই প্রপেশনের সেরা ব্যক্তিগুলোকেই আইডল হিসেবে বিবেচনা করে। এই প্রশ্নের উত্তরে, আপনার মতে যেই ব্যক্তিকে অনুকরণ করার কমপক্ষে একটি সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে এমন কাউকে বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ।

তাঁর ক্রিয়াকলাপগুলো আপনাকে কীভাবে অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত করে তা ব্যাখ্যা করুন। তবে এক্ষেত্রে আপনার দেখানো আইডল যে একেবারে নিখুঁত হতে হবে তা নয়। কারণ সবার মাঝেই ত্রুটি আছে। তাই আপনি তাঁর ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে তুলে ধরতে পারেন কিনা এবং তাঁর প্রশংসা করতে পারেন কিনা তা সনাক্ত করার জন্য এই প্রশ্নটি তৈরি করা হয়েছে।

পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান: ভবিষ্যৎ সর্বদা অনিশ্চিত। তাই এমন কোনো উত্তর দিবেন না যাতে আপনার সম্পর্কে তাদের কোনো ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়। হতে পারে আপনার স্বপ্ন অনেক বড়। কিন্তু তাদের কাছে সেটাই উপস্থাপন করুন, যেটা আপনার দ্বারা সহজে করা সম্ভব।

স্কলারশিপ সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের উপায়: এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি ‘এই স্করারশিপটি আপনাকে কীভাবে আপনার লক্ষ্যার্জনে সহায়তা করবে?’ সেই বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে পারেন। তারা আপনার কাছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইবে না। তবে একরকম একাডেমিক পরিকল্পনা আশা করে। পরবর্তী পাঁচ বছরে আপনি কী অর্জন করতে চান তা বিবেচনা করুন।

যেমন ‘আমি একজন লেকচারার হতে চাই। তাই আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে আমি যথেষ্ট ভালো ফলাফল করার চেষ্টা করবো। এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের চেষ্টা করবো।’ এই শিক্ষার্থীর আবেগগুলো কীভাবে তার ভবিষ্যতের সাথে সম্পর্কিত, তার একটি স্পষ্ট চিত্র রয়েছে এবং সে ইতিমধ্যেই তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।

আপনার পছন্দের বিষয় কোনটি: এই প্রশ্নের উদ্দেশ্যই হলো আপনার শেখার প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা কেমন তা নির্ধারণ করা। আপনি কোন বিষয়ে ভালো ফলাফল করেছেন সেটা মুখ্য বিষয় না, বরং সেই বিষয়ের কোন জিনিসটা আপনার পছন্দ হয়েছে তা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হওয়াটাই যুক্তিপূর্ণ। আপনার পছন্দের বিষয়ের উপর নির্ভর করবে আপনার মানসিকতা ও সৃষ্টিশীল ক্ষমতা। তাই পছন্দের বিষয় নির্ধারণে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এমন কোনো বিষয় সম্পর্কে বলুন যেটার মৌলিক বিষয়গুলো আপনি জানেন এবং অন্যকে ভালো বোঝাতে পারেন।


সর্বশেষ সংবাদ