মাদ্রাসায় পড়েও আমি যেভাবে হাফ ডজন স্কলারশিপ পেলাম

ব্যাচেলরে ৩.৪ সিজিপিএ, আইএলটিএস-এ ৬.৫ এবং জীবনের অধিকাংশ সময় মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেও ইউরোপের সবচেয়ে বড় বড় স্কলারশীপগুলো পাওয়াটা সত্যিই আমার কাছে বড় ব্যাপার। 

আমি নিজেই বিস্মিত হয়েছি ২টি ইরাসমাস, ১টি শেভেনিং, ১টি অস্ট্রেলিয়ান এওয়ার্ড ও ১টি সুইডিশ ইনস্টিটিউটের মত স্কলারশীপগুলো পেয়ে। প্রথম স্কলারশীপটা পাওয়ার পর মনে হচ্ছিল এটা কোন দুর্ঘটনা ছিল, এই মাপের স্কলারশীপ পাওয়ার যোগ্য আমি নই। কারণ, ব্যাচেলরে ৩.৪ সিজিপিএ, আইএলটিএস-এ ৬.৫ এবং জীবনের অধিকাংশ সময় মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেও ইউরোপের সবচেয়ে বড় বড় স্কলারশীপগুলো পাওয়াটা সত্যিই বড় ব্যাপার।

তবে সবগুলো স্কলারশীপ পাওয়ার পর আমার মধ্যে দুটি উপলব্ধি আসে। প্রথমত: কার জন্য কী অপেক্ষা করছে কেউই জানে না এবং দ্বিতীয়ত: যে কেউ যেকোন কিছু করতে পারে।

অনেকে আবেদন করার আগে খুঁজে খুঁজে ১০০টা কারণ বের করেন আবেদন না করার পক্ষে। আমার তো এইটা নাই, ওইটা নাই, থাক আর একটা বছর ধৈর্য্য ধরি…..ইত্যাদি বাহানা। আপনি যদি এই দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে আটকে থাকেন, আমার পরামর্শ থাকবে আর কালক্ষেপন না করে এই মুহূর্তে কাজে নেমে পরেন, একটা উপায়  ঠিকই বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে এক বড়ভাই (এখন কানাডার ম্যাকগিলে পড়ছেন) প্রায়ই একটা কথা বলতেন, “রকিব, নিজেই নিজেকে থামিয়ে দিও না, এপ্লাই কর, ইউনিভার্সিটির উপর ছেড়ে দাও, দেখ কি হয়”।

আফসোস সেই বড়ভাই তার বিভাগে প্রথম হয়েও এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারেন নাই মাদ্রাসা থেকে আলীম পাশ করার কারণে। সম্প্রতি এক বন্ধু আমাকে প্রশংসা করে বলে, “তুই মাদ্রাসায় পরেও এত ভালো করছিস!” বন্ধুর ভাব-ভঙ্গিমায় মনে হচ্ছে এগুলো “মান্না-সালওয়া’র” মত আকাশ থেকে নাযিল হয়েছে, এর পেছনে আমার অনবরত খাটুনি বন্ধুটির চোখ কিভাবে সহসাই এড়িয়ে গেল ভেবে পাই না! মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক পাবলিক ভার্সিটিতে প্রথম সারির অনেক সাবজেক্টে পড়তে দেয়া হয় না, কিন্তু তারা ঠিকই বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধা তালিকায় প্রথম হয়, এমনকি শিক্ষক পর্যন্ত হয়…..।

পূর্ব সতর্কতাঃ আগেই বলে রাখছি লেখাটি দারুন সংক্রামক। উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী, বিশেষ করে আমার মত গ্রামগঞ্জের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্যই লেখা হয়েছে। অন্যরা সময় নষ্ট না করে এখনই কেটে পড়তে পারেন পরে স্কলারশীপের নেশায় পেয়ে গেলে আমি দায়ী নই।

এবছর আমার ছোট্ট একটা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে স্কলারশীপ যারা পেয়েছেন তারাই একাধিক পেয়েছেন, যাদের হয়নি কোথাও হয়নি।এরকম আমার কিছু সিনিয়র আছেন যারা একাধারে ৩/৪ বছর যাবৎ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু কোথাও স্কলারশীপ হচ্ছেনা অথচ তারা যেকোন মাপকাঠিতে দারুন যোগ্যতর। তাই আমি বলব শুধু কঠোর পরিশ্রম নয়, সুদক্ষভাবে সময়ের কাজগুলো সময়ের মধ্যেই গুছিয়ে ফেলা উচিৎ। তখন আর শেষমুহূর্তে হা-হুতাশ করতে হবেনা। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন রহস্য উন্মোচন করি: “ভাইয়া, বিদেশে স্কলারশীপ পেতে হলে আমার কি কি করা লাগবে?”

খুব বেশি কিছু নয়, নিচের এই ৬টি মাপকাঠিতে আপনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যাবে।

১. সিজিপিএ
২. পাবলিকেশন্স
৩. মোটিভেশনস
৪. রেকমেন্ডেশন
৫. এক্সপেরিয়েন্সেস
৬. এবং স্কোর

বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রায়ই বলতে শুনেছি বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ন্যূনতম ৩.৭৫ সিজিপিএ পেতে হবে, অন্তত ৩.৫০ তো ধরে রাখতেই হবে। কথাটি শুধু আংশিক ও অসত্যই নয়, আমার মত বৃত্তিপ্রার্থীদের জন্য ছিল দারুন হতাশাব্যাঞ্জক। তবে এটা সত্য যার সিজিপিএ যত বেশি তার সম্ভাবনাও তত বেশি। যাদের সিজিপিএ আমার মত ৩ পয়েন্ট এর আশেপাশে তাদেরও নিরাশ হওয়ার কিছুই নাই। শুধু আমি একা নই, এবছর আমারদের সাথে আরো কয়েকজন ৩.০৮ সিজিপিএ নিয়ে একাধিক এরাসমাস স্কলারশীপ পেয়েছে। সিজিপিএ এর ঘাটতি পাবলিকেশন্স দিয়ে কাটানো যেতে পারে। পাবলিকেশন্স আবার কি? সহজ কথায় গবেষণামূলক লেখালেখি। প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত যেকোন প্রকারের হতে পারে।

জার্নাল, কনফারেন্স এমনকি নিউজপেপারেও আপনি লিখতে পারেন। পাবলিকেশন্স ছাড়া বিদেশি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু স্কলারশীপ পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ। আপনার মাথায় এখন যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে–কোথায় লিখব, কিভাবে লিখব, কখন শুরু করব, কার কাছে যাব ইত্যাদি ইত্যাদি। গুগলে কনফারেন্স এলার্টসহ অনেক এডভার্টাইজিং ওয়েবসাইট আছে যাতে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন কনফারেন্স সম্বন্ধে তথ্য পেতে পারেন। তাছাড়া আপনার পরিচিতদের মধ্যে এই মুহূর্তে যারা বিদেশে পড়াশোনা করছেন তাদের কাছে থেকে কিভাবে কনফারেন্স পেপার লিখতে হয় তাও জেনে নিতে পারেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি গুগলে প্রচুর উচ্চশিক্ষা বিষয়ক ব্লগ পড়তাম ও এ বিষয়ক ফেইসবুক গ্রুপ থেকে অনেক বড়ভাইদের কাছ থেকেও সহায়তা পেয়েছি। বিভিন্ন ব্যস্ততায় সবাই হয়ত সহায়তা করতে পারেনি, কিন্তু তাদের কিছু পরামর্শ ও সহায়তা আমার স্কলারশীপ পাওয়ার পেছনে দারুন ভূমিকা রেখেছে।

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মোটিভেসন্স, SOP, Stories, article অথবা Essay এগুলো প্রায় একই বিষয়কে বোঝায়। যে যেই নামে ডাকে এই আর কি, তবে “গল্প” শব্দটি আমার বেশ পছন্দের। SOP হচ্ছে আপনার ব্যক্তিগত গল্প, বিষয়টি কেন পড়তে চাচ্ছেন? পূর্ব অভিজ্ঞতা কি, গ্রাজুয়েশন শেষে দেশে ফিরে এসে কি করবেন? অন্য দশজনকে বাদ দিয়ে আপনাকে কেন নেয়া উচিত? ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে গল্পের মত করে লেখা।

এডমিশন কমিটি এমনকি এও জেনে নিতে চায় আপনি মানুষ হিসেবে কেমন। উচ্চশিক্ষার ধকল সামলাতে আপনি কতটুকু প্রস্তুত আছেন পাশাপাশি আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড, প্রতিভা, অভিজ্ঞতা, সক্ষমতার একটা প্রতিচ্ছবিও তারা এই এক টুকরো কাগুজে গল্প থেকে জেনে নিতে চায়। SOP যেমন নীরস গোরচনা নয় আবার অতিরঞ্জিত আত্মজীবনীও নয়, এটি ছোটগল্পের মত পরিমিত, প্রাসঙ্গিক ও রসালো করে লেখা বিষয়ভিত্তিক জীবনকথা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

অধিকাংশ শিক্ষার্থী মনে করে এডমিশন কমিটি যেভাবে চায় আমাকে সেভাবেই প্রদর্শিত হতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে তারা চায় আপনি আপনার মতই থাকেন কারণ এতে আপনি আপনাকে আরো ভালোভাবে তুলে ধরতে পারবেন। তারা এমন কাউকে খুঁজছেনা যে প্রত্যেক বিষয়ে পণ্ডিত , এসডিজির ১৭টা বিষয়েই স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছে, মাঠে মঞ্চে সমান পারদর্শী, নির্ভেজাল ও নিষ্কলুষ। সুতরাং যা না তার ভান ধরে নিজেকে সর্বশ্রেষ্ট প্রমানেরও কোন তাড়াহুড়ো নেই এখানে, ওরা কোন নিখুঁত মহামানব খুঁজছেননা, ওরা আপনাকে খুঁজছে, আপনার ভিন্নতা, প্রাসঙ্গিকতা, স্বেচ্ছাসেবা, মেধামনন, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ দুর্বলতাকে পুরস্কৃত করতে চাচ্ছে।

লেখা শুরুর আগে বিস্তর চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন, কোন বিষয়ে আপনি সবচেয়ে ভালো লিখতে পারবেন। প্রতিদিন অল্প অল্প করে লিখেন অল্প অল্প করে সংশোধন করেন। আপনার জীবনের মধ্যে খুঁজে দেখেন এরকম হয়ত একাধিক অগোছালো গল্প পেয়ে যাবেন, সেখান থেকে ছোট্ট একটা গল্প তুলে আনুন যা উচ্চশিক্ষার সাথে প্রাসঙ্গিক ও একইসাথে প্রেরণামূলক। তারপর এসব অস্বচ্ছ অসংগঠিত গল্পগুলোকে মেরামত করে প্রয়োজনমত কেটেছেঁটে নিলেই হল।

গল্পকে মসৃন করতে দিনের পর দিন চিন্তা করে প্রাসঙ্গিক বানাতে হয়। সংক্ষিপ্ত ও পরিষ্কার করে বর্ণনা করুন আপনি যা বলতে চান। শিক্ষক ও বন্ধুমহলে এ বিষয়ে আলাপচারিতা করতে পারেন। ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কেউ হয়ত আপনাকে কিছু ভুল ধরিয়ে দিবে যা আপনি আপাতদৃষ্টিতে দেখতে পারছেন না। বিদেশে অধ্যয়নরত ২/৩ জন সিনিয়রদের গঠনমূলক মতামত নেয়া যেতে পারে। সবার পরামর্শ নিতে গেলে আবার লেখার মৌলিকতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে কারণ প্রত্যেকেরই ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে যা হয়ত তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে আপনার ক্ষেত্রে ওভাবে কাজে নাও আসতে পারে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ থেকে এসওপি লেখা শুরু করি মজার ব্যাপার হচ্ছে এখনো সংশোধন করছি পিএইচডি’র পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে।

প্রায়শই আমরা আমাদের বিচ্ছিন্ন গল্প লিখে দিয়ে আসি যা প্রশ্নের সাথে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি সাবজেক্ট অনুযায়ী সিভি, সপ সংশোধন করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা উচিত। আপনি যত ভালই লিখেন না কেন, প্রশ্নের যথার্থ উত্তর না দিলে এডমিশন কমিটি আপনার সত্যিকারের আগ্রহের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করবে যার একটা নেতিবাচক প্রভাব তো আছেই। মনে রাখবেন পুরো প্রক্রিয়াটাই কিন্তু বাছাই পদ্ধতি, ছাঁটাই করতে করতে যারা অবশিষ্ঠ থাকেন তারাই স্কলারশিপ পান। অর্থাৎ তারা আপনার গুনের চেয়ে দোষ খুঁজবে বেশি।

এসওপি পুরো আবেদন প্রক্রিয়ার একটি অংশ বিশেষ মাত্র। তাই অন্যান্য বিষয়গুলো যেমনঃ রেকমেন্ডেশন, এক্সপেরিয়েন্স, স্কোর, ইন্টারভিউ ইত্যাদি বিষয়গুলোতেও সমান গুরুত্ব দেয়া দরকার।

কার কাছ থেকে সুপারিশ লেটার পাব বোধ করি এটা আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাথাব্যাথার কারণ। এদেশে সুপারিশপত্র দেয়ার অর্থ হচ্ছে যেন জমাজমি লিখে দেয়া। প্রায়শই শোনা যায় দিনের পর দিন ঘুরে ঘুরে শিক্ষক অথবা উচ্চ কর্মকর্তাদের কাছে আরজি করে একখানা সাক্ষর পাওয়া যেতে পারে আবার নাও পারে। এগুলো উচিত নয়, এই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। এই না দেয়ার সংস্কৃতির মধ্যে আমি একটা উপায় খুঁজে নিয়েছিলাম: আমার অনেক সুপারিশপত্র আমার সহকর্মীরা লিখে দিয়েছেন তাই আর উঁচুতলাদের কাছে দিনের পর দিন ধর্ণা দিতে হয়নি।

মোটকথা হচ্ছে কে সুপারিশপত্র দিচ্ছে ঐটা অত গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাতে কি লেখা আছে দিনশেষে তা-ই মূল্যায়িত হয়।সুপারিশপত্রের খসড়াটা আপনি নিজেই লিখে দিতে পারেন কারণ আপনাকে আপনিই ভালো জানেন, পরে হয়ত শিক্ষক অথবা উর্দ্ধতন কর্মকর্তা সংশোধনের পরামর্শ দিতে পারেন। যে হয়ত কোনদিন ইমেইল চেক করেনা এরকম সেকেলে কোন শিক্ষকের কাছ থেকে কমন ফরম্যাটের সুপারিশপত্র (অর্থাৎ আরেকজনের নাম ফেলে দিয়ে আপনার নাম বসিয়ে দেয়া) নেয়ার অর্থ হচ্ছে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার মত। কাজের অভিজ্ঞতা স্বেচ্ছাসেবা ও চাকুরী থেকে নেয়া যেতে পারে। আমার যদিও দুটোই ছিল।

আমার এই ক্ষুদ্র সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ সম্ভবত স্বেচ্ছাসেবা আর পশ্চিমা শিক্ষাব্যবস্থায় স্বেচ্ছাসেবীরা কিংবদন্তির মর্যাদা পায়। কোন ভলান্টিয়ারিং অর্গানাইজেশনের জন্য কাজ করা আর নিজে কোন ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগ নেয়ার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে। এদেশে মাঠের তরুণরা রাতদিন খাটে আর বাহবাহ নেয় উপরতলার সংগঠকেরা, তারপর মাঠের এই তরুণেরা কোন দরকারে সার্টিফিকেট অথবা রেকমেন্ডেশন চাইতে গেলে নানান ধরণের বাহানা। তাই আমার পরামর্শ থাকবে নিজে অথবা সমমনা বন্ধুরা মিলে কোন সংগঠন বা প্রজেক্টের ফাউন্ডার/কোফাউন্ডার হওয়া। নিজেদের কোন প্রজেক্ট বা অর্গানাইজেশন থাকলে আপনি আপনার মত করে এর ইমপ্যাক্ট বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে দেখাতে পারবেন। এবার যে প্রশ্নটা আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তা হচ্ছে: “কিভাবে শুরু করব, ভাইয়া?”।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, শুরু করতে পারেন সফল তরুণদের প্রজেক্ট ও প্রোফাইল রিসার্চ করার মধ্য দিয়ে। কুইন্স ইয়ং লিডার, ফোর্বস, ওমেন ডেলিভার, ওয়ান ইয়ং ওয়ার্ল্ড, ১২০ আন্ডার ৪০ এ রকম অনেক ওয়েবসাইটে তরুণদের উদ্যোগ নেয়া বিভিন্ন প্রজেক্ট সম্মন্ধে ধারণা পেতে পারেন, পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিকূলতায় তাদের বেড়ে উঠার ও সাফল্যের গল্পগুলোও আপনাদের দারুন অনুপ্রাণিত করবে। অন্যদিকে, দেশের প্রতিষ্ঠিত তরুণ সংগঠনগুলো যেমন: জাগো, সেইস, বিওয়াইএলসি, Youth School For Social Entrepreneurs (YSSE), ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশ এবং বিদেশী সংস্থা আমেরিকান সেন্টার, ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইএমকে সেন্টার ইত্যাদি সংগঠনগুলোর মেম্বারশিপ নিয়ে সরাসরি ভলান্টিয়ারিং এক্সপেরিয়েন্স নিতে পারেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেইস (SAYS) এর সাথে যুক্ত, সংগঠনটি আমাদের মত অনেক তরুনের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব বিকাশে মুখ্য ভূমিকা রাখে। তাছাড়া গুলশানের আমেরিকান সেন্টারেও আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। প্রতি সপ্তায় ওখানে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সেমিনার হত। এই ধরণের সংগঠনগুলো থেকে প্র্যাকটিকাল এক্সপেরিয়েন্স নেয়ার পর নিজেরা কোন কিছুর উদ্যোগ নিতে পারেন। যেমন একপর্যায়ে আমরা বন্ধুরা ক’জন মিলে Peacempire নামক একটা স্টোরিটেলিং অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা করি। অত পরিচিত নয়, তাতে যদিও কিছু আসে যায় না, কাজ হলেই হল। সংগঠনটি আমাদের প্রত্যেকের সাফল্যের ক্ষেত্রে দারুন ভূমিকা রাখে।

অনলাইনে আপনার ও আপনার সংগঠন সমন্ধে যত বেশি কন্টেন্ট থাকবে আপনি তত বেশি সুবিধা পাবেন। একটা ফেইসবুক পেইজ খোলা, ব্লগে লেখালেখি করা, ইউটিউব, ওয়েবসাইট ডিজাইন করে আপনি আপনার কমিউনিটি সার্ভিসকে উপস্থাপন করতে পারেন। কেনা ওয়েবসাইট ভালো, তারপরেও প্রচুর ফ্রী ওয়েবসাইট আছে যেখানে আপনি এইসব কমিউনিটি সার্ভিসকে প্রচারিত করতে পারেন। গ্রামের কোন স্কুলে গিয়ে প্রোগ্রাম করে আসলেন, ওরাও খুশি হবে, আপনারও ভালো লাগবে আর মাঝখানে প্রজেক্টেরও কাজ হল। আর আপনার সংগঠন যদি অনলাইন ভিত্তিক হয়, তাহলে স্কুলে যাওয়াও প্রয়োজন নেই। আপনার যেইভাবে সুবিধা হয় সেইভাবেই আগান। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন আপনার স্বেচ্ছাসেবা যেন উচ্চশিক্ষার সাথে মিল থাকে। ধরুন পড়তে চাচ্ছেন “শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন” নিয়ে আর ভলান্টিয়ারিং করতেছেন “মহাকাশ” নিয়ে তা হয়ত আপনার পুরো এপ্লিকেশনটাকে নষ্ট করে দিতে পারে। আবারো বলছি: আপনার ব্যাচেলর স্ট্যাডিজ, পাবলিকেশন্স, এসওপি, রেকমেন্ডেশন ও এক্সপেরিয়েন্সেস যেন নির্দিষ্ট একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে হয়। এ জায়গাতে গড়মিলের কারণেই অনেক সম্ভাবনাময়ী তরুণরা শেষ পর্যন্ত আর স্কলারশীপগুলো পেয়ে উঠেনা।

ভলান্টিয়ারিং হচ্ছে অনানুষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা। ইন্টার্নশিপ ও প্রাতিষ্টানিক চাকুরী থেকে ফর্মাল এক্সপেরিয়েন্সেস নিতে পারেন। আমি ব্যাচেলর শেষে মাষ্টার্স এ ভর্তি না হয়ে সোজা একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেই। থিঙ্কট্যাঙ্কটির নাম: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটিজ স্ট্যাডিজ। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা অনেকটা বাধ্যতামূলকের মত। আমার কাছে হাস্যকর লাগে এদেশে সবাই পালবেধে ব্যাচেলর শেষে মাষ্টার্সে ভর্তি হয়ে যায়। অথচ ইউরোপে এসে দেখলাম দশ ভাগ মানুষের মাষ্টার্স ডিগ্রী আছে কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

বিদেশের প্রশ্ন উঠলে যে শব্দটি প্রথম আপনার মাথায় আসে তা হল ‘আইএলটিএস’। বিষয়টি আহামরি গুরুত্বপূর্ন না হওয়াতে আমি ইচ্ছা করেই সবার শেষে লিখছি। মানুষজন যদি আইএলটিএসের চেয়ে পাবলিকেশন্স এ বেশি সময় দিত তাহলে উচ্চশিক্ষায় আরো বেশি সাফল্য পেত। আইএলটিএস অনেকট হ্যা/না প্রশ্নোত্তরের মত, আছে কি নাই এতটুকুই জানতে চায় কর্তৃপক্ষ। ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা ন্যূনতম সেই স্কোরটি থাকলেই হল, এ দিয়ে এডমিশন কমিটি আপনার মেধা যাচাই করবে না।তবে আমি একে খাটো করেও দেখছিনা। আমার স্কলারশীপগুলো আইএলটিএসের জন্য আটকে ছিল, ডেডলাইনের মধ্যে তড়িঘড়ি করে স্কোর না পাঠাতে পারলে হয়ত সবগুলো স্কলারশীপই হাতছাড়া হয়ে যেত। তাই বিষয়টিকে অবহেলা করার সুযোগ নাই। একটা সিক্রেট বলি: আইএলটিএস পরীক্ষা দেয়ার আগে প্রতিদিন ৩ ঘন্টা কয়েক সপ্তাহ মকটেষ্ট দিয়ে নিয়েন। আমি কলাবাগান মেন্টর্স এ দুই সপ্তাহ মকটেস্ট দিয়েছিলাম। সেন্টারটি তুলনামূলকভাবে কম খরুচে ও টিচাররাও অনেক অমায়িক ও বন্ধুত্বসুলভ।

বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে মাত্র ১৭০০ জন আবেদন করে এবং তাদের মধ্যে মাষ্টার্স, পিএইচডিসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৮৯ জন ইরাসমাস স্কলারশীপ পায়। অবশ্য ২০১৪-১৫ সেশনে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ৯৭ জন ইরাসমাস স্কলারশীপ পেয়েছিল। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মেধা-মনন, পেশাদারিত্ব ও অধ্যবসায় এই অর্জনের বিশেষ কারণ বলে আমি মনে করি। তাই হয়ত আমরা অন্যান্য অনেক দেশ থেকে স্কলারশীপ প্রাপ্তিতে এগিয়ে আছি যেমন আমাদের সময় ভারত থেকে ৭৩ জন, ইরান থেকে ৬০ জন, পাকিস্তান থেকে ৪৮ জন ও চীন থেকে ৪০ জন ইরাসমাস স্কলারশীপ পায়। এই সেপ্টেম্বর থেকে আবারও এপ্লিকেশন শুরু হচ্ছে। প্রায় ১৪০টি প্রোগ্রামে আপনারা এপ্লাই করতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে কম করে হলেও এবছর পাঁচ হাজার এপ্লিকেশন দেখতে চাই এবং আমরা ১০০+ জন স্কলারশীপ পেয়ে শতক উদযাপন করব।

যদিও অনেক কঠিন কথা বলতে হয়েছে বাস্তবতার কারণে, তারপরেও লেখাটির মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষাভীতি দূর করা। এবার একটু ফ্রী বিজ্ঞাপন দেই। বর্তমানে ইরাসমাস স্কলারশীপ নিয়ে “সিকিউরিটি, ইন্টিলিজেন্স ও স্ট্রাটেজিক স্ট্যাডিজ” এ মাষ্টার্স পড়ছি। গতকাল তৃতীয় সেমিস্টার পড়তে চেক প্রজাতন্ত্রের চার্লস ইউনিভার্সিটিতে এসেছি। এর আগে দুই সেমিস্টার শেষ করেছি যথাক্রমে স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে। এবং সামার স্কুল করেছি জার্মানিতে। এখানে আমার ইমেইল লিখে দিলাম (rhasan@wdyoungleaders.org)। ই-মেইলের সাবজেক্টে “হাফ ডজন” লিখে চটজলদি যেকোন প্রশ্ন করে ফেলতে পারেন। (পুনঃপ্রকাশিত)


সর্বশেষ সংবাদ