উচ্চশিক্ষায় বিনামূল্যে বিশ্বসেরা ৮ শিক্ষাবৃত্তি

  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা অনেকটা ব্যয়বহুল হওয়ায় ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও অনেকে  সেটা করতে পারছেন না। ভঙ্গ হচ্ছে তাদের সুখের স্বপ্ন। তবে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন তরুণ শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে।‘দ্যা ডেইলি ক্যাম্পসের’ পাঠকদের জন্য বিনামূল্যে বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে এমন ৮টি শিক্ষাবৃত্তির কথা ‍তুলে ধরলাম-

১. ইরাসমুস মুন্ডুস (ইউরোপ)
উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপের দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চাইলে আবেদন করতে পারেন ইউরোপিয়ান কমিশন প্রদত্ত ‘ইরাসমুস মুন্ডুস’ স্কলারশিপের জন্য। এই স্কলারশিপের মূল উদ্দেশ্য উচ্চতর শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো এবং শিক্ষাগত সহযোগিতার মাধ্যমে জনগণ ও সংস্কৃতির মধ্যে যোগাযোগ এবং বোঝাপড়া বৃদ্ধি করা।

সিভি, একাডেমিক যোগ্যতা, মোটিভেশন ও রেকোমেন্ডেশন লেটার, ভাষা দক্ষতা, ইত্যাদির ভিত্তিতে ইউরোপীয় কমিশনকতৃক নির্ধারিত নির্বাচন কমিটির সদস্যরা স্কলারশিপের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করে থাকেন। ‘ইরাসমুস মুন্ডুস’ স্কলারশিপের অধীনে টিউশন ফি, জীবনযাত্রার খরচ অর্ধেক খরচ, বিমান খরচ, লাইব্রেরি ফি, পরীক্ষা ফি, গবেষণা সংক্রান্ত ফি সব খরচ বহন করা হয়। এছাড়াও প্রতিটি মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সের ক্ষেত্রে একাধিক দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি থাকায় এই স্কলারশিপের অধীনে শিক্ষার্থীরা কোর্স চলাকালে নূন্যতম দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পাবেন।

২. কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপ (যুক্তরাজ্য)
কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ প্রদান করে থাকে। স্কলারশিপটি ইউকে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) দ্বারা অর্থায়িত হয়।

বৃত্তিটি প্রতিভাবান এবং উদ্যমী শিক্ষার্থীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করতে সহায়তা করে থাকে। বৃত্তির আওতায় একজন শিক্ষার্থী পাবেন বিনা টিউশন ফিতে যেকোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ। এছাড়াও আবাসন ও বসবাসের আনুষঙ্গিক খরচ এবং বিমানে যাতায়াত খরচও বহন করা হয়।

৩. এন্ডেভার পোস্ট পোস্টগ্রাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস (অস্ট্রেলিয়া)
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে পছন্দের প্রথম তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, এর প্রধান কারণ অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা। যে সকল শিক্ষার্থী মাস্টার্স বা পিএইচডি কোর্সের জন্য অস্ট্রেলিয়া যেতে চান, তারা ‘এন্ডেভার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস’ নামক শিক্ষাবৃত্তিটির জন্য আবেদন করতে পারেন। এ স্কলারশিপের আওতায় রয়েছে বিনামূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ এছাড়াও ভ্রমণ ভাতা, মাসিক ভাতা এবং স্বাস্থ্য বীমাসহ পূর্ণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

৪. শেভেনিং স্কলারশিপ (যুক্তরাজ্য)
যুক্তরাজ্য সরকারের একটি গ্লোবাল স্কলারশিপ প্রোগ্রাম ব্রিটিশ ‘শেভেনিং স্কলারশিপ’। ১৯৮৩ সালে এই বৃত্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এতে অর্থায়ন করে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস বা এফসিও। যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এ স্কলারশিপের অধীনে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১৫০০ জন শিক্ষার্থী এ স্কলারশিপের অধীনে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এই বৃত্তির আওতায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে এছাড়াও মাসিক ভাতা বিমান ভাড়া ও নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে চাইলে আপনার দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং কোর্স শেষ হওয়ার দু বছরের মধ্যে নিজ দেশে ফিরে আসার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

৫. ফুলব্রাইট স্কলারশিপ (যুক্তরাষ্ট্র)
যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট স্টুডেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় বিশ্বের ১৫৫টি দেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভের সুযোগ পান। ১৯৪৬ সালের ১ আগস্ট ফুলব্রাইট বৃত্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এই প্রোগ্রামের আওতায় টিউশন, বিমান যাতায়াত ভাড়া, বসবাসের জন্য মাসিক ভাতা এবং স্বাস্থ্য বীমা বহন করা হয়।

৬. আইফেল এক্সেলেন্স স্কলারশিপ (ফ্রান্স)
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার পরেই সারা বিশ্বের ছাত্রছাত্রীদের শীর্ষ পছন্দের দেশ ফ্রান্স। শিক্ষা ও গবেষণায় ফ্রান্সের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আকৃষ্ট করতে ফরাসি সরকার বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে ‘আইফেল এক্সেলেন্স স্কলারশিপ’ অন্যতম। ফ্রান্সে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে চাইলে ‘আইফেল এক্সেলেন্স স্কলারশিপ’ এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এই স্কলারশিপের অধীনে শিক্ষার্থীদের মাসিক ভাতা হিসেবে ১,১৮১ ইউরো প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিমান ভাড়া ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করা হয়ে থাকে।

৭. সুইডিশ ইন্সটিটিউশন স্টাডি স্কলারশিপ (সুইডেন)
‘সুইডিশ ইন্সটিটিউশন স্টাডি স্কলারশিপ’ এর অধীনে বিশ্বের মোট ৫৫০ জন বিদেশি শিক্ষার্থীদের সুইডেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের সুযোগ পান। এ শিক্ষাবৃত্তির আওতায় টিউশন ফি, জীবন যাত্রার খরচ, আংশিক যাতায়াত খরচ ও বীমা খরচ বহন করা হয়।

৮. যৌথ জাপান বিশ্ব ব্যাংক গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ (গ্লোবাল)
বর্তমানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের কাছে জাপানের নাম তালিকার শীর্ষের দিকেই থাকে। যেসকল শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানকে বেছে নিতে ইচ্ছুক তারা ‘যৌথ জাপান বিশ্ব ব্যাংক গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ’ এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এ শিক্ষাবৃত্তির অধীনে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, মাসিক ভাতা, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য বীমা খরচ বহন করে থাকে।


সর্বশেষ সংবাদ