৩ বছরে ফলাফল সর্বোচ্চ

  © সংগৃহীত

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে। বিগত তিন বছরের তুলনায় এবার পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দশটি শিক্ষা বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। অন্যদিকে, শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। অন্যদিকে কমেছে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা।

ফলাফলের সূচকে বিগত তিন বছরের তুলনায় এ বছর যে উন্নতি হয়েছে তা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য খুবই ইতিবাচক বলে মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত নানা পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকগণের অক্লান্ত প্রচেষ্টাসহ সমগ্র শিক্ষা পরিবারের সার্বিক সহযোগিতায় এ অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রশ্নপত্র সহজ বা কঠিন করায় পাশের হারে প্রভাব পড়েনি। যারা ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তারা ভালো করেছে, আর যাদের প্রস্তুতি দুর্বল ছিল তারা ভালো ফল পায়নি। তবে যে সকল বোর্ড ভালো করছে তারা আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের ভালো ফলের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে।

বুধবার একযোগে দেশের দশটি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। দুপুর ১টায় সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত ফলাফল তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। তারপর শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এবং মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানতে পারছেন।

এর আগে সকালে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষা বোর্ডের প্রধানরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন। এরপর সচিবালয়ে ফলাফলের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ২২ জন। এরমধ্যে পাস করেছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন আর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন।

এর মধ্যে এইচএসসিতে আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ১১ লাখ ২৬ হাজার ১২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৯ হাজার ১৪৯ জন। অর্থাৎ, পাসের হার ৭১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর তাদের মধ্যে ৪১ হাজার ৮০৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। মাদ্রাসা বোর্ড থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৬ হাজার ১৩৮ জনের মধ্যে ৭৬ হাজার ২৮১ জন পাস করেছে। অর্থাৎ, পাসের হার ৮৮ দ্শমিক ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৪৩ জন।

আর কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩২০ জন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ লাখ ২ হাজার ৭১৫ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ৬২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩ হাজার ২৩৬ জন।

এবার শূন্য পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪১টি, গতবছর এরকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিলো ৫৫টি। তবে এর বিপরীতে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এ বছর ৯০৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। যেখানে গতবছর শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিলো ৪০০টি।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, পাসের হারে দিক দিয়ে এবার ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। ছাত্রদের মধ্যে পাসের হার যেখানে ৭১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, সেখানে ৭৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। অন্যদিকে, এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। এরমধ্যে মেয়েরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২ হাজার ৭১০ জন এবং ছেলেদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪ হাজার ৫৭৬ জন। অর্থাৎ মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা পাসের হারে পিছিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১ এপ্রিল চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ১১ মে। এরপর ১২ মে থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়ে ২১ মে শেষ হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৫৫তম দিনে এ ফলাফল ঘোষণা করা হলো।

৩ বছরে পাসের হার সর্বোচ্চ: দশটি শিক্ষা বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। যা গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ৬৮.৯১ শতাংশ। তাছাড়া ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৭৪.৭০ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৬৯.৬০ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৭৮.৩৩ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৭৪.৩০ শতাংশ, ২০১২ সালে ৭৮.৬৭ শতাংশ, ২০১১ সালে ৭৫.০৮ শতাংশ, ২০১০ সালে ৭৪.২৮ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে পাসের হার ছিল ৭২.৭৮ শতাংশ।

৩ বছরে জিপিএ-৫ এ সর্বোচ্চ: এবার দশটি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। যা গত ৩ বছরে সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৯ হাজার ২৬২ জন আর ২০১৭ সালে ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। তাছাড়া ২০১৬ সালে ৫৮ হাজার ২৭৬ জন, ২০১৫ সালে ৪২ হাজার ৮৯৪ জন, ২০১৪ সালে ৭০ হাজার ৬০২ জন, ২০১৩ সালে ৫৮ হাজার ১৯৭ জন, ২০১২ সালে ৬১ হাজার ১৬২ জন এবং ২০১১ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন।


সর্বশেষ সংবাদ