এইচএসসি পরীক্ষায় সাফল্য

দৃষ্টিহীনতা দমাতে পারেনি যাদের

পাবনার ১৬ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর একজন জিপিএ-৫ সহ সবাই উত্তীর্ণ হয়েছেন
পাবনার ১৬ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর একজন জিপিএ-৫ সহ সবাই উত্তীর্ণ হয়েছেন

চোখের আলো নেই। তারপরও থেমে থাকেনি ওরা। দৃষ্টিহীনতা দমাতে পারেনি তাদের। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের ধারায় অবস্থান করে নিয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও।

পাবনার ১৬ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর একজন জিপিএ-৫ সহ সবাই উত্তীর্ণ হয়েছেন। এছাড়া সিলেট ও রংপুরে দুইজন করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।

এবারই প্রথম পাবনার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সর্বাধিক সংখ্যক অর্থাৎ ১৬ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এইসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশিত ফল অনুযায়ী তাদের সবাই সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।

এদের মধ্যে পাবনার মনিরুল ইসলাম জিপিএ-৫, নরসিংদীর শিহাবুদ্দিন ভুইয়া ৪.৮৩, মো. আবদুল্লাহ ৪.০৮, টাঙ্গাইলের আবদুল্লাহ আল আমিন ৪.০৮, আবুল কালাম আজাদ ৪.১৭, গোপালগঞ্জের ইখতেয়ার মৃধা ৪.০৮, জামালপুরের গোলাপ মল্লিক ৪.৬৭, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহাদত হোসেন ৩.৯২, পঞ্চগড়ের রোকনুজ্জামান ৩.৫০, দিনাজপুরের আবদুল আজিজ ৪.২৫, কুড়িগ্রামের ইমরান হোসেন ৩.৫০, রাজশাহীর মনিরুজ্জামান ৪.১৭, ময়মনসিংহের মোজাম্মেল হক ৪.৪২, জয়পুরহাটের মোহাম্মদ আলী ৪.৮৩ এবং বরিশালের হুমায়ুন কবির ৪.২৫ পেয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।

পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে এ ১৬ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এইচএসসি পরীক্ষা দেন। এসব অন্ধ যুবক শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পাবনা শহীদ বুলবুল কলেজ, শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ ও জাগির হোসেন একাডেমি কেন্দ্র থেকে এইসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। 

সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এবার সাফল্য দেখিয়েছেন দুই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তারা হলেন কয়েছ মিয়া ও সমীর রঞ্জন বিশ্বাস। পরীক্ষায় দুজনই বি গ্রেড পেয়েছেন। সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার আসামপুর গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্ম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. কয়েছ মিয়ার। সংসারের অভাব-অনটন ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হওয়ার ফলে ছোটবেলাতেই তার আশ্রয় হয় সিলেটের গ্রিন ডিসঅ্যাবল্ড ফাউন্ডেশনে (জিডিএফ)। এখানেই তার বেড়ে ওঠা। সিলেটের মজুমদারি গ্রিনসিটি ইন্টারন্যাশনাল কলিজিয়েট স্কুল থেকে মানবিক বিভাগে অর্জন করেছেন বি গ্রেড। তার বাবা মো. সাবাজ আলী একজন মৎস্যজীবী এবং মা মোছা. আমিনা বেগম গৃহিণী। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে কয়েছ মিয়া সবার বড়।

একইভাবে মজুমদারি গ্রিনসিটি ইন্টারন্যাশনাল কলিজিয়েট স্কুল থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বি গ্রেড অর্জন করেছেন সমীর রঞ্জন বিশ্বাস। তিনিও মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস গ্রামে। তার বাবার নাম সুবল বিশ্বাস ও মাতার নাম ললিতা রাণী বিশ্বাস। শিশু বয়সে তার আশ্রয় হয় কয়েছের মতো গ্রিন ডিসঅ্যাবল্ড ফাউন্ডেশনে। এক ভাই, চার বোনের সংসারে সমীর ভাইদের মধ্যে সবার বড়। 

রংপুর থেকে এবার দুইজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাদের নাম-মো. রিপন ইসলাম ও মো. রিপন মিয়া।  তাদের স্বপ্ন এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে পাস করে সরকারি কর্মকর্তা হওয়া।

লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে মো. রিপন ইসলাম। তিনি রংপুর সদর উপজেলার চকইসবপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। মানবিক বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৩.৭৬ পান। রিপন ইসলামের বাবা কৃষক। চার ভাইয়ের মধ্যে রিপন দ্বিতীয়। বাবার আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহায়তায় লেখাপড়া শুরু করেন। সেখান থেকে এতদূর এসেছেন।

মো. রিপন ইসলামের মতো রিপন মিয়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আশা প্রকাশ করেন। তিনিও চকইসবপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৩.৩৩ পান। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার রাজবল্লব গ্রামের নয়া মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বাবা গরিব মুদি দোকানি। তাই তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত চন্দনপাট হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন।

রিপন মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেতে পারলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার আশা আছে।


সর্বশেষ সংবাদ