করোনাকালেও থেমে নেই বেরোবির শাহীন বাউলার গানের সুর

  © টিডিসি ফটো

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগে অধ্যয়ন করেন শাহীন বাউলা। ১৯৯৩ সালে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশাই জন্মগ্রহণ করেন তিনি। যেন নামের সাথেই জুড়িয়ে আছে তার কর্ম। খুব ছোটকাল থেকেই বাবার অনুপ্রেরণায় গানের সাথে মিলিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। যখন যেভাবে পারতেন গান আত্মস্থ করতেন এবং গাইতেন।

ফোক গান, লালন সংগীতসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক গানে মিশিয়েছেন নিজের সুর। মাতিয়ে তুলেছেন ভক্তদের। বেরোবি ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক জগতে সর্বসাধারণের মাঝে গানের সুরে বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তিনি। সঙ্গীতের প্রতি রয়েছে তার প্রবল সহানুভূতি। কিন্তু হঠাৎ করোনা পরিস্থিতি যেন থামিয়ে দিয়েছে তার এই প্রতিভা। সঙ্গীতের প্রতি তার যে মায়া সেটা যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য নিজ এলাকাতে গিয়েও বসে নেই এই শাহীন বাউলা।

তিনি জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসে মূলত সারা পৃথিবীই অবরুদ্ধ। পৃথিবীটাই কেমন জানি অন্যরকম হয়ে গেছে। সবাই হারিয়ে যাওয়া চিরচেনা পরিবেশ খুঁজছে। গানের মাঝেই সকল সুখ ও আনন্দ খুঁজে পান তিনি। এজন্য সারাটা দিনই নিজ এলাকার হাওরপাড়ে বসে বসে গানের চর্চা করেন। হাওরের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে আর মনের মাধুরী মিশিয়ে গান গেয়েই কেটে যায় দিনের বেশিরভাগ সময়। এই করোনা মহামারীতে সুখ পাবার উপকরণ এই হাওরের অপরুপ চিত্র আর মরমি বাউল গান। কখনো শীষ বাজিয়ে কখনো গলা ছেড়ে গান গান শাহীন বাউলা।

স্বপ্ন দেখেন একদিন বড় গায়ক হবেন তিনি। নিজেকে নিয়ে যাবেন সাংস্কৃতিক জগতের অনন্য শিখড়ে সাথে সারাদেশে নিজের প্রিয় ক্যাম্পাস বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও উজ্জ্বল করতে চান তিনি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ফোক ব্যান্ড “ভবতরী লোকসংগীত দল” নিজ প্রচেষ্টায় গড়েছেন এবং লীড ভোকালের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।

এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে লোকসংগীতকে ইতিবাচকভাবে মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়া। বেরোবিতে লোকগান ছড়িয়ে দিতে সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই চেষ্টা করে আসছেন শাহীন বাউলা। এই মহামারীর সময়েও ফেসবুক, ইউটিউবে গান আপলোড করে ভক্তকুলের মাঝে বিচরণ করছেন তিনি।

শাহীন বাউলা জানান, ফেসবুক টাইমলাইন, ইউটিউবে গান আপলোড করে বেশ সাড়াও পেয়েছি ভক্ত অনুরাগীদের। বাড়িতে আসার সময় সাথে করে লোক-বাদ্যযন্ত্র খমক নিয়ে এসেছি। এলাকাতেও বিভিন্ন গানের আসর, অনুরোধের আসর এবং স্টেজ শো করছি। ক্যাম্পাসে আমার ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলবো ‘আমি যেখানেই থাকি না কেন তোমরা আমাকে পাবে সেটা অনলাইনেই হোক বা অফলাইনেই।’

শাহীন বাউলার লেখা এবং সুর করা মৌলিক গান “পিরিতের নাও শুকনায় চলে” বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভবতরী লোকসংগীত দল এর “কাভার সং” বাংলার ঐতিহ্য আর শুদ্ধ সংস্কৃতির লালন করেন তিনি। “আমরা ভবতরী লোকসংগীত দল” গানটিও তারই লেখা এবং সুর করা। তার একটা বিশেষত্ব হলো মুখেই বিভিন্ন ধরণের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে অনায়াসে যে কোন গানের সুর তুলতে পারেন তিনি।
ভবিষ্যৎ জীবনে গানের এই এ ধারা অব্যাহত রাখবেন বলে দুয়া চেয়েছেন সকলের কাছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গানের মঞ্চসহ রংপুর বিভাগ এবং দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ হয়েছে এই গায়কের।

তবে বাড়িতে থেকে এই মহামারীতে অনেক ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন শাহীন বাউলা। তার মধ্যে অন্যতম হল অর্থনৈতিক সমস্যা। একাডেমিক পড়াশোনা শেষ আর এই মহামারীর সময় পেশাদারী সংগীত জীবনে বড় এক ধাক্কা লেগেছে তার। কারণ এখন সব ধরণের স্টেজ পারফরম্যান্স থেকে বঞ্চিত তিনি। তিনি জানান, ‘আমার মতো গায়ক আর মিউজিশিয়ানদের খুব বাজে ভাবে যাচ্ছে করোনাকালীন এই সময়টা।’

 


সর্বশেষ সংবাদ