বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নেই কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা

  © সংগৃহীত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) গণিত বিভাগের ছাত্রী সুপ্রিয়া দাস। মেধাতালিকায় ২য় স্থানে থেকে স্নাতক শেষ করেছিলেন তিনি। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গলায় ফাঁস দিয়ে নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেছেন মেধাবী এই ছাত্রী। তাঁর এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। তারা বলছেন, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন না ঘটে সেজন্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোন ধরনের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নেই। এর আগে বিভিন্ন সময়েসাইকোলজিস্ট নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও সেটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানা গেছে।

জানা যায়, গত ১৫ জুন আত্মহত্যা করা ছাত্রী সুপ্রিয়ার প্রেমিক তপু মজুমদার আত্মহত্যা করে। এরপর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। তপু আত্মহত্যার জন্য সামাজিকভাবে তাকে দোষারোপসহ নানান কটূক্তি করা হয়। সামাজিক ও মানসিক চাপেই সুপ্রিয়া আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সহপাঠী-বন্ধুরা। এ কারণে সুপ্রিয়ার মৃত্যুর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট নিয়োগের জন্য।

শুধু সুপ্রিয়া দাসই নয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে মানসিক অবসাদে ভুগছেন। করোনাকালে অর্থনৈতিক স্থবিরতা, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা, পরিবারের সদস্যেদের সুস্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধে সেশনজটের শঙ্কা এবং ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী হতাশ বলে জানা গেছে।

একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিষন্নতা আর উদ্বেগ বর্তমানে তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। খাওয়া-দাওয়া, ঘুমের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় কাজগুলোর ধরণ পাল্টে গেছে। সবচেয়ে বেশি মানসিক অবসাদে আছেন যারা নিজেরা করোনা সংক্রমিত হয়েছেন অথবা পরিবারের কোন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। যারা আক্রান্ত হননি তারাও আক্রান্তের আশঙ্কায় উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ছোটন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, বিষন্নতা বা উদ্বেগ যে শুধু এই করোনাকালীন সময়ে তৈরী হচ্ছে মোটেও তা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যৌবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করি। এই সময়েই মূলত জীবনের বিভিন্ন জটিল অধ্যায়ের সাথে পরিচয় ঘটে। অনেকে মানিয়ে নিতে পারেন আর একটি বড় অংশ হতাশায় ডুবে যান। তাদের সবাই সুইসাইড করেন না ঠিকই কিন্তু অনেক সম্ভাবনার মৃত্যু হয় হতাশায়, অভিমানে অথবা ভুল পথে পা বাড়িয়ে।

তিনি বলেন, সুপ্রিয়া দাসের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পেশাগত সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করতেই পারেন। তবে প্রত্যেক শিক্ষকের শিক্ষার্থীঘনিষ্ঠ হওয়া অতি জরুরী। শিক্ষকরা যত বেশি ছাত্রবান্ধব হবেন শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ততো বেশি নিরাপদ থাকবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফ হোসেন বলেন, অতীতেও আমরা একজন সাইকোলজিস্ট নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছিলাম। করোনার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা এ বিষয়ে জোরালো আহবান জানাবো।

তিনি বলেন, আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। এটা কোন ধর্ম, সমাজ স্বীকৃতি দেয় না। জীবনে অনেক বাঁধা আসে, সেটা ওভারকাম করতে হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত ক্রাইসিসগুলো ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হয়। বই পড়া, পারস্পরিক যোগাযোগ, বন্ধুবান্ধব, গুরুজন, শিক্ষকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ, পরিবারের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর ফলে এই হতাশা-অবসাদ থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি।


সর্বশেষ সংবাদ