ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজে বড় সেশনজটের শঙ্কা

  © ফাইল ফটো

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী নভেলকরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ কারণে থমকে আছে কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর একাডেমিক কার্যক্রমও। তবে বন্ধ থাকা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে তা নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় তীব্র সেশনজটের আগাম হাতছানিতে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি ৭ কলেজের প্রায় আড়াই লাখের মতো শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থী বলছেন, ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে সেশনজটসহ নানান সমস্যা লেগেই ছিল। তবে প্রশাসনের দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টায় সেশনজটের মাত্রা অনেকটা কাটিয়ে উঠলেও করোনার বন্ধে আরও বড় ধরনের সেশনজটের মুখোমুখি হবার শঙ্কা রয়েছে। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।

ঢাকা কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বেলাল হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে এই অচলাবস্থা আরো দীর্ঘ সময় চলতে থাকে তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হব আমরাই। এমনিতেই দীর্ঘ সেশনজট এবং একাডেমিক কার্যক্রমে নানাধরণের সমস্যা আমাদের নাকাল করছে। তার উপর এমন অবস্থা চলতে থাকলে সেশনজট দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷

ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী সুমাইয়া জাফরিন বলেন, আমরা যারা নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছি আমাদের সেশনজট না থাকলেও দীর্ঘদিন একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগের সেশনগুলোর মতো আমরা নতুনরাও সেশনজটের কবলে পড়বো।

তিতুমীর কলেজের ছাত্র মাসুদ বিন মর্তুজা বলেন, ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা এমনিতেই দেড়বছর পিছিয়ে পড়েছি। পাবলিক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আমার বন্ধুরা এবার শেষ বর্ষে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে আর আমি এখনো তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষাই দিতে পারিনি। করোনার এমন অবস্থায় সামনে সেশনজটের মাত্রা আরো ভয়াবহ হবে বলে মনে হচ্ছে। অনাগত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলেই কোন কূলকিনারা পাচ্ছিনা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। করোনার প্রভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ২০১৭ সনের চলমান মাস্টার্স পরীক্ষা।

ঢাকা কলেজের মাস্টার্স ১৬-১৭ সেশনের ছাত্র ওবায়েদুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালে যে পরীক্ষা হবার কথা ছিলো সেই পরীক্ষা ২০২০ সালে দিচ্ছি। তাও আবার করোনাভাইরাসের কারণে দুটি পরীক্ষা হবার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে। সেশনজটের কারনে আমাদের সরকারি চাকরির বয়সও শেষ হবার উপক্রম হয়েছে। কর্তৃপক্ষ যদি এই পরিস্থিতির পর কার্যকরী পদক্ষেপের গ্রহণ না করে তবে আমাদের সরকারি চাকুরিতে বয়সের সময়সীমাই চলে যাবে। এমন অবস্থায় সামনের দিনের কথা চিন্তা করলেই হতাশা কাজ করছে।

এমন পরিস্থিতিতে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এবং ৭ কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্ল্যাহ খোন্দকার বলেন, আমরা দীর্ঘ সময়ের চেষ্টায় সেশনজটের সমস্যা প্রায় কাটিয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সেই কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছে। তবে এখনো আমরা আশাবাদী, শিগগির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়েই শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম সমাপ্ত করতে পারবো।

প্রসঙ্গত, শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এরপর থেকে এই সাতটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া, পরীক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ