বরিশাল কলেজ

বরিশাল কলেজ: নতুন নামকরণের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ

  © টিডিসি ফটো

সরকারি বরিশাল কলেজের নাম ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের’ নামে নামকরণের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বরিশাল জেলা শাখা।

আজ বুধবার নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বিভিন্ন শ্রমিক, নারী ও ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এরপর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠনটির নেতারা।

জানা গেছে, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডকে ‘সরকারি বরিশাল কলেজের’ নাম পরিবর্তন করে ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের’ নামে নামকরণের যৌক্তিকতা উল্লেখ করে সুপারিশ পাঠাতে বলা হয়েছে। সুপারিশের প্রেক্ষিতে সার্বিক বিবেচনায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এরপর গত সপ্তাহে কলেজের নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করে কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ব্যানারে নগর আওয়ামী লীগের একাংশ সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে হুশিয়ারি উচ্চারণ বলা হয়, যদি নাম পরিবর্তন করা হয় তাহলে বরিশালের ছাত্রসমাজের মাঝে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে।

এদিকে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আজ কলেজের নাম ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের’ নামে নামকরণের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বরিশাল জেলা শাখার নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে বাসদ জেলা আহ্বায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমন বলেন, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে বরিশাল সরকারি কলেজের নামকরণের দাবিতে কয়েক যুগ ধরে বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণ মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে করার সুপারিশ জারি হওয়াটা শুধু মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের মতো বড় মানুষের স্বীকৃতিই নয় পাশাপাশি বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও দাবির স্বীকৃতিও বটে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানাই এবং অবিলম্বে এই সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই। 

সংগঠনের সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, বৃটিশ আমলে বরিশালের শিক্ষা, রাজনীতি এবং জ্ঞান অন্বেষণে পুরোধাব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। আকর্ষণীয় আইন পেশা ছেড়ে মানুষের জন্য জীবন বিলিয়ে গেছেন, পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্রজমোহন স্কুল (১৮৮৪), ব্রজমোহন কলেজ (১৮৮৯)। দুটো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তৎকালীন অবিভক্ত বাংলা ও ভারতে শ্রেষ্ঠত্বের আসন অর্জন করে নিয়েছিল।

তিনি বলেন, বরিশালের সামাজিক-রাজনৈতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অবিস্মরনীয় হয়ে আছে। আজকের বরিশাল কলেজ ছিল অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবন। এই বাসভবনের অঙ্গনেই তার রোপন করা তমাল বৃক্ষতলে বরিশালের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বহু যুগান্তকারী তৎপরতার শুরু হয়েছিল। বরিশালের প্রগতিশীল মানুষজনের প্রতিবাদের পরেও তার বাসভবনটি সংরক্ষণ না করে ভেঙ্গে ফেলা হয়। অশ্বিনী কুমারের বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল কলেজে অশ্বিনী কুমারের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় কিছুই নেই। তাই বরিশালের প্রগতিশীল ও সর্বস্তরের সচেতন মানুষজনের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণ এই সংগ্রামী ও মহান ব্যক্তি অশ্বিনী কুমারের নামে করার সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের বিবেচনাধীন থাকার কথা আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি। যা আমাদের আশান্বিত করেছে।

তিনি আরও বলেন, তবে আবার আমরা গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, একটি কুচক্রি মহল মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণের বিরোধীতার অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন। আমরা এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে বরিশাল সরকারি কলেজের নামকরণ মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের নামে করার প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়নে দাবি জানাই।

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নগরির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে সংগঠনটির নেতারা।