বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অনলাইন শিক্ষায়’ চাপ সৃষ্টি আত্মঘাতী

  © প্রতীকী ছবি

মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের এই সময় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদালয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে যে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে তা আত্মঘাতী হবে বলে মনে করেছেন শিক্ষকরা। তাই অনলাইনে ক্লাস শুরুর আগে শতভাগ শিক্ষার্থী যেন এই কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে সে বিষয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব সংক্রান্ত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ। প্রশ্নোত্তরপর্বে আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, কামরুল হাসান মামুন, কাজী এস ফরিদ, শর্মী হোসেন, কিবরিয়া ইসলাম, সিত্তুল মুনা হাসান, খাদিজা মিতু ও আরিফুজ্জামান রাজীব।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারির বৈশ্বিক বিস্তারের ফলে চলতি বছরের মধ্য মার্চ থেকে বিগত সাড়ে তিনমাস ধরে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আক্ষরিক অর্থে বন্ধ রয়েছে। তবে এপ্রিল মাস থেকে ইউজিসি (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) থেকে ‘অনলাইন-ক্লাস’ চালুর জন্য কিছু জরিপ কার্যক্রম লক্ষ্য করা গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ খোলার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা সমন্বিত নির্দেশনা এখনো আসেনি।

শিক্ষকরা বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সেশনজট ও নানা সংকটের আশঙ্কায় এখন আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিশেষ অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা একটি সম্ভাব্য উপায় হতে পারে। তবে অপরিকল্পিত, অপ্রস্তুত ও বৈষম্যমূলক পন্থায় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তা চালুর চেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আত্মঘাতী হবে। আর এসব শুরুর আগে আমাদের প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের বাস্তব অসুবিধার কথা বিবেচনা করতে হবে।

অনলাইন শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক নানা প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়ে শিক্ষকরা বলেন, এতে নানা সমস্যার কারণে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা ও দক্ষতার অভার রয়েছে। অনলাইন কোর্সের জন্য বিশেষায়িত কারিকুলাম তৈরি ও বাস্তবায়নের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। কারিকুলাম ও একাডেমিক প্রক্রিয়ার পর্যালোচনা ও পুনর্বিন্যাস না করে কোনো ইন্টারনেট-নির্ভর শিক্ষা কার্যক্রমে যাওয়ার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়।

এছাড়াও মহামারীর কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বাড়ি ফিরে গেছেন এবং প্রান্তিক স্থানে উপযুক্ত ইন্টারনেট সংযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিচ্ছিন্ন অনেকেরই নতুন করে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন কেনারও সামর্থ্য নেই। ইন্টারনেট সেবার অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং তা শিক্ষার্থীদের কাছে বিনামূল্যে পৌঁছানো ছাড়া শিক্ষাকে অনলাইনে নিয়ে গেলে তা নতুন ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি করবে।

এসময় ইউজিসির এ-সংক্রান্ত জরিপ কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর এই অনলাইন জরিপে অংশগ্রহণের কোনো উপায়ই নেই বা জরিপের প্রশ্নের মধ্যে নানা ফাঁক রয়েছে। শুধু অনলাইনে থাকতে পারা শিক্ষার্থীদের মাঝে জরিপ চালিয়ে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়ার সক্ষমতা যাচাই করা যায় না।

 


সর্বশেষ সংবাদ