১৫ বছরে পা দিচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

  © সংগৃহীত

কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশ্বের প্রাচীন শালবন বিহারের কোলঘেঁষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) অবস্থান। ছোট-বড় পাহাড়ে ঘেরা লালমাটির ক্যাম্পাস এ বিশ্ববিদ্যালয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মে) ১৪ বছর পেরিয়ে এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৫ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। 

বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে চলমান করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপিত হচ্ছে না এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

২০০৬ সালের ২৮ মে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মে) ১৪ বছর পেরিয়ে ১৫তম বর্ষে পদার্পণ করবে দেশের অন্যতম এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। স্বল্প পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হলেও প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। ৮টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে বেরিয়ে পড়েছেন দেশ ও দেশের মানুষের সেবায়।

কুবি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
৭ম-৮ম শতাব্দীর দিকে জ্ঞানচর্চার আতুড়ঘর ছিল এ ময়নামতি শালবন বিহার। প্রাচীন বাংলার ‘সমতট’ রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল ‘লালমাই-ময়নামতী’। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে (কারও কারও মতে সপ্তম শতাব্দী) দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ওই রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল ৫০০ মাইল। সপ্তম শতাব্দীতে চন্দ্রবংশীয় রাজা ভবদেব এখানে আনন্দ বিহার বা শালবন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন।

৬০ এর দশক থেকে কুমিল্লাবাসীর দাবি ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার। সে প্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালে কুমিল্লায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা থাকলেও সেটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ পায়। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে কুমিল্লায় একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু পরে ২০০৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কুমিল্লায় এক জনসভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর ২০০৬ সালের ২৮ মে ২৬তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এর ঠিক এক বছর পরে ২০০৭ সালের ২৮ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।

বর্তমান অবকাঠামো
২০০৬ সালে ৫০ একর জমির উপর ৩০০ জন শিক্ষার্থী আর ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় পাহাড় আর সমতলের এ বিদ্যাপীঠ। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে মোট ১৯টি বিভাগে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অধ্যায়ন করছেন প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করছেন ২৫৩ জন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য রয়েছে চারটি আবাসিক হল।

ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলা, মুক্তমঞ্চ, বৈশাখী চত্বর, শহীদ মিনার, সানসেট ভ্যালি, বাবুই চত্বর ও লালন চত্বর ক্যাম্পাসের উল্লেখযোগ্য স্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। ডিবেটিং ক্লাব, সায়েন্স ক্লাব, বিএনসিসি, সাংবাদিক সমিতি, থিয়েটার, প্রতিবর্তন, প্লাটফর্ম, আইটি সোসাইটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গেল বছর ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রকল্পটির নতুন ভূমি অধিগ্রহণে প্রায় ২০০ একর জায়গা নেয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ৫টি নীল বাস, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে ডরমেটরির দুটি ভবন। তাছাড়া একটি ছাত্রী হল এবং শিক্ষকদের জন্য একটি ডরমেটরি ও একটি গেস্টহাউজ নির্মাণাধীন রয়েছে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ছয় জন। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়টির ৬ষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপাচার্যের কথা
বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে চলমান করোনা ভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপিত হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টির এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য বছরের প্রথমেই একটা পরিকল্পনা নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের এ পরিস্থিতিতে আমাদের সবারই তো হাত-পা বাঁধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সকল উপাচার্যবৃন্দদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানোর পরিকল্পনাও আমারা নিয়েছিলাম। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আগামীতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিবসটি উদযাপন করবো।

করোনাভাইরাসের এ মহামারিতে সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে এবং নিজ বাসায় অবস্থান করার পরামর্শ দিয়ে উপাচার্য বলেন, আমরা এখনও পর্যন্ত ভাগ্যবান যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কেউ এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়নি। আমরা সবাই অনেক সচেতন বলেই সম্ভব হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাই সুস্থ থাকুক সেই প্রত্যাশাই করছি।


সর্বশেষ সংবাদ