সৌন্দর্যবর্ধনের আড়ালে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আফিম চাষ!

  © টিডিসি ফটো

নিষিদ্ধ মাদক ‘আফিম’ তৈরির কাঁচামাল পপি ফুল। আর আফিম থেকেই তৈরি হয় হিরোইন ও মরফিন। যার চাষ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। তবুও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) উপাচার্যের বাসভবন থেকে শুরু থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হলগুলোর সামনে সৌন্দর্যবর্ধনের আড়ালে চাষ হয়ে আসছিল এ আফিম। তবে নিষিদ্ধ ফুল ক্যাম্পাসে চাষের বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, তারা বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না এবং অজানা বিষয় সম্পর্কে কথা বলতে রাজি না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও বাসভবনে ৪ প্রজাতির পপি ফুল চাষ লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে সাদা, লাল, গোলাপি ও হলুদ রঙের। ফল যখন পরিপক্ব হয় তখন ব্লেড দিয়ে ফলের গায়ে গভীর করে আঁচড় দেওয়া হয়। ফলে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর এর ফল থেকে কষ বের হয় এবং চাষিরা তা সংগ্রহ করে। আর এই কষ হলো আফিমের কাঁচামাল।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদজিয়াউর রহমান হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ আমীর আলী, মতিহার, মাদারবক্স, শহীদ শামসুজ্জোহা হল থেকে শুরু করে শেরে-বাংলা হল-প্রাধ্যক্ষের বাসভবন, মমতাজউদ্দীন কলাভবনসহ উপাচার্যের বাসভবনেও রয়েছে নিষিদ্ধ এই পপি ফুলের গাছ।

কিছু সংখ্যক ‘পপি’ গাছ দেখে যে কারও মনে হতে পারে কৌশলে অন্যান্য ফুলের সঙ্গে সৌন্দর্যবর্ধনের আড়ালে রাখা হয়েছে তবে কোনটি আবার প্রকাশ্যেই রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে ও ভিতরে আছে অসংখ্য পপি ফুলের গাছ। হলের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো ফুল গাছের আড়ালেই দেখা মিলছে এসব আফিমের চাষ।

সৈয়দ আমীর আলী হলের অভ্যন্তরেও রয়েছে নিষিদ্ধ এই ফুলের অসংখ্য গাছ। হলটির বাগানে অন্যান্য ফুল গাছের সাথে মিশে আছে এগুলো। এদিকে মতিহার হলে প্রবেশর বাম পাশের বাগানে বাহারি সব ফুলের মাঝে চাষ করা হচ্ছে পপি ফুল। এছাড়াও পপি ফুলের গাছ রয়েছে জিয়া ও জোহা হলের ১ম ব্লক, মাদারবক্স হলের ৩য় ব্লক, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এবং শেরে-বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষের বাসভবনের ফুলের বাগানেও পাওয়া গেছে পপি ফুলের অসংখ্য গাছ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, যেকোনো প্রজাতির পপি ফুল গাছ উৎপাদন, বাজারজাত ও চাষ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবুও কেন বাগানে পপি ফুল চাষ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মালীদের সে বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান সবাই। জোহা হলে মালী পশাল বলেন, ‘আমরা জানি এটি পপি ফুল কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যে রোপণ করা হয়নি। ফুলটি অনেক সুন্দর এর জন্য রোপণ করা হয়েছে।’

পপি ফুলের ছবিসহ কয়েকটি ফুল ও ফল দেখালে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুঞ্জুর হোসেন বলেন, এটি অবশ্যই নিষিদ্ধ পপি ফুল। যেটি বাংলাদেশে চাষ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ক্যাম্পাসে পপি ফুল গাছ আছে তা আমি আগে জানতাম না। তবে এই বিষয়গুলো প্রশাসনের আরো সচেতন হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ ড. রওশন জাহিদ বলেন, আমরা ফুলটি বহুবার পর্যবেক্ষণ করেছি। তবে তা পপি, আমি জানতাম না। তবে হল প্রাধ্যক্ষ গত শুক্রবার পপি ফুলের বিষয়টি অবহিত হওয়ার সাথে সাথেই হলের পপি ফুলগাছগুলো নির্মূল করেছেন।

এদিকে সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. আমিনুল ইসলামকে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ পার্থ বিপ্লব রায়ের বাসভবনে (আবাসিক) পপি ফুল গাছ থাকলেও তিনি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ কুমার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ একটি নিরাপদ স্থান। এখানে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কর্মরত কর্মচারীরা অসৎ উদ্দেশ্যেও পপি ফুল গাছ চাষ করতে পারে। তবে আমাদের সচেতন হতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানি না এবং বিষয়টি অজানা থাকায় আমি মন্তব্য করতে পারছি না। ঘটনাটি সত্য হয়ে থাকলে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।’


সর্বশেষ সংবাদ