ভিন্নমতের হওয়ায় কাঁটা-কম্পাস দিয়ে খোঁচানো হয় ছাত্রীটিকে!

ভিন্নমতের কারণেই নির্যাতনের শিকার হন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সেই ছাত্রী। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ছাত্রীটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। তার ক্ষতস্থান থেকে সংক্রমন হয়েছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

তাঁদের মতে, ছাত্রদলের রাজনীতি করার কারণে ছাত্রীটিকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করায় এবং তা প্রত্যাহার করে না নেওয়ায় নির্যাতন করা হয়েছে। তবে তার আগে শিবির করার অভিযোগ তোলা হয় ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে।

ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, গত ১ মার্চ বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে একাডেমিক ভবনের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎ ১২ থেকে ১৫ জন মুখোশধারী তাঁর পথরোধ করে। পরে পঞ্চম তলার নির্জন স্থানে নিয়ে বেদম মারধর করে। একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হাতে থাকা জ্যামিতি বক্স থেকে এর কাঁটা-কম্পাস দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করে তারা।

তার স্বজনেরা জানিয়েছেন, তাঁর বুক, পিঠ, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাঁটা-কম্পাস দিয়ে অসংখ্য খুঁচিয়ে জখম করা হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ওই ছাত্রীর শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সুচালো কিছুর আঘাতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।

ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের নামাজের জায়গা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে গণিত বিভাগের ছাত্র মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত তাকে শিবিরের তকমা দেন। এর আগেও কয়েকবার হেনস্তা ও হামলার শিকার হয়েছেন তিনি।

ছাত্রীর বড় বোন জানান, হামলার পর নিরাপত্তার অভাবে বোনকে তিন দিন বাসায়  চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তাঁর ক্ষতে সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় ঢাকায় নেওয়া হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলন সময় সক্রিয় থাকায় তাকে হুমকি দেয়া হতো। তিনি জানান, তাঁর বোনকে ২০১৮ সালে একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়, ‘ছাত্রদল করো, ধর্ষণের পর হত্যা করে কীর্তনখোলা নদীতে ফেলে দেব।’

এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় জিডি করা হয়েছিল। এরপর জিডি প্রত্যাহার করার জন্য নানাভাবে তাঁর বোনকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে তাঁর বোনের ওপর এ জঘন্য হামলা হয়।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নির্যাতন ও সহিংসতা গুজব প্রতিরোধে উপাচার্যের নিকট স্মারকলিপি কতিপয় শিক্ষার্থীরা। তাতে ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনাকে অবিশ্বাস্য ও মিথ্যার অভিযোগে বিচার দাবি কার হয়। এতে আলিম সালেহীন নামে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রের স্বাক্ষর রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আগেও হেনস্তা করার অভিযোগ তুলেছেন ওই ছাত্রী। এ ব্যাপারে আলিম সালেহীন বলেন, ‘ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, তবে কোনো হুমকি দেইনি।

ওই ছাত্রীর অভিযোগ, বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান হেনা রাণী তাকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে মারছে, কি করছে, দেখার বিষয় না।’ এসময় সাদা কাগজ দিয়ে লিখতে বলেন, ‘এখানে লেখো, তোমার শিবির সম্পৃক্ততা আছে।’ বিভাগের শিক্ষক সুজিত বালাও বলেছেন, ‘তিনি ছাত্রদল করেন, পাস করতে পারবেন না।’

তবে হেনা রাণী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। সেদিন তিনি মহিউদ্দিন এবং ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে বুঝিয়েছেন। জিডির বিষয়ে তিনি জানতেন না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস বলেন, ‘এ ঘটনায় ছাত্রীর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাননি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে বুধবার রাতে তিনি ঘটনাটি জেনেছেন।’


সর্বশেষ সংবাদ