সেই আমেনার দখলে দু’টি চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক

  © টিডিসি ফটো

শিক্ষা জীবনে অসামান্য অবদানের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রথম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পেয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী আমেনা বেগম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুই শ্রেণীতেই স্বর্ণপদক পাওয়া আমেনা এখন সাবার কাছে একটি অনুপ্রেরণার নাম। তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ভালো মেধার অধিকারী। বরাবরই সকল শ্রেণীতে প্রথম সারিতে উত্তীর্ণ হওয়াই যেন তাঁর জন্য নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

আর তাইতো বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দু’টিতেই পেয়েছেন শিক্ষায় অসামান্য অবদানের এই স্বীকৃতি। হাজারো প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে ছিনিয়ে নিয়েছেন চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক।

১৯৯১ সালে কুমিল্লা জেলার বড়ুড়া উপজেলার নলুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আমেনা। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বড় ভাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন।

বড় বোন খাদিজা বেগমও তাঁর সাথে একই মঞ্চে মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছেন। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েল গণিত বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। আর ছোট বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ছোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন।

আমেনার বাবা মোহাম্মদ হানিফ স্থানীয় একটি দাখিল মাদরাসার শিক্ষক। তাঁর সামান্য বেতনে পাঁচ সন্তানকেই দেশের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়িয়েছেন।

9

১১৯৭ সালে নলুয়া-মরনাহরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৭ সালে পেরপেটি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ভর্তি হন আড্ডা ডিগ্রী কলেজে।

২০০৯ সালে জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোন তিনি। মাধ্যমিকের চেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে খারাপ করাকে তিনি কোনভাবেই ব্যার্থতা বলে মনে করেননি। বরং নিজের ভেতরের স্বত্তাকে আরও জাগিয়ে তুলেছেন। এক্ষেত্রে বাবার অনুপ্রেরণা ও কলেজের শিক্ষকদের সহযোগীতায় কোন পথ ই কঠিন মনে করেননি।

বলেন, ‘বাবা এতোটাই আগলে রেখেছেন, মনে হতো পৃথিবীর সব কাজই আমার পক্ষে সম্ভব। উচ্চ মাধ্যমিকে রেজাল্ট খারাপ করা কোনও বিষয় বলেই মনে হয়নি। আত্মবিশ্বাস ছিল, আমি যেখানেই যাবো ভালো কিছু করবো।’

ছোটবেলা থেকেই টেকনোলজি সম্পর্কে আগ্রহ ছিল আমেনার। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে বিভিন্ন ব্যাবহারিক বিষয়গুলোতে খুব বেশি মনোযোগ দিতেন। আর তাই প্রকৌশলভুক্ত কোন বিষয় নিয়ে পড়ার স্বপ্নই অন্তরে লালন করতেন সবসময়।

উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি অতিক্রম করে ২০১০ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগে ভর্তি হন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিলেও আশানুরুপ অর্থাৎ প্রকৌশলভূক্ত কোন বিষয় না পাওয়ায় তিনি ভর্তি হননি।

নিজের এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ হওয়ায় বাবার ইচ্ছায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি হন। শুরু করেন শিক্ষা জীবনের নতুন অধ্যায়।

তিনি জানান, ‘ভর্তি পরীক্ষায় আমি ২২তম হই। সিরিয়াল অনুযায়ী বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল অনুষদের যে কোন বিষয় নিয়েই আমি পড়তে পারতাম। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই টেকনোলজি সম্পর্কে আমার খুব আগ্রহ ছিল। তাই সিএসই এবং আইসিটি এ দুটিই আমার চয়েজ ছিল।’


সর্বশেষ সংবাদ