জোহা দিবসের স্বীকৃতি আজও মেলেনি

  © টিডিসি ফটো

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পাকিস্তানি বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে ড. শামসুজ্জোহাকে। এরপর থেকে রাবি কর্তৃপক্ষ ১৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ ড. জোহা দিবস পালন করে আসছে। কিন্তু পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও জাতীয়ভাবে এখনও এ দিবসের স্বীকৃতি মেলেনি।

মঙ্গলবার ৫১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে জ্জোহা স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে। আয়োজন থেকে দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবসের ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

দিবসের কর্মসূচিতে ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৭টায় উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, চৌধুরী মো. জাকারিয়াসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকতার্গণ শহীদ ড. জোহার সমাধী ও জোহা স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করেন।

এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন ইত্যাদি প্রভাতফেরিসহ শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে।

সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় জোহা স্মারক বক্তৃতা। এতে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন রাবির সাবেক উপাচার্য এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার প্রফেসর এম সাইদুর রহমান খান। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান এবং পৃষ্ঠপোষক উপ-উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়াও বক্তৃতা করেন ।

সাইদুর রহমান খান বলেন, ড. জ্জোহা ছাত্র শিক্ষক সম্প্রীতির এক জলন্ত উদাহরণ। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত সার্জেন্ট জহরুল হককে ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলখানায় গুলি করে হত্যা করা হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদুল্লাহ্ কলাভবনের সামনের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ড. জ্জোহা বলেছিলেন, যে কোন ছাত্রের শরীরে গুলি লাগার আগে যাতে আমার গায়ে গুলি লাগে। জোহা তার জীবনদানের মধ্য দিয়ে সেটি প্রমাণ করে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, জোহার মৃত্যুর পরে কারফিউ জারি করা হয় এবং তার মৃত্যু সংবাদ আলোর গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ঢাকায় সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে প্রতিবাদ মিছিল হয়। জোহা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন আরও তরান্বিত হয়। তবে দিবসটি জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণা করা হয়নি যা আমাদের ব্যথিত করে।

স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে শহীদ জোহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। সেখানে শহীদের জীবনালেখ্যও উপস্থাপন করা হয়। সেখানে অন্যদের মধ্যে ছাত্র-উপদেষ্টা প্রফেসর লায়লা আরজুমান বানু, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রভাষ কুমার কর্মকার, প্রক্টর প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান, অনুষদ অধিকর্তা, রসায়ন বিভাগসহ অন্য বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্জোহা চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়।

এছাড়া দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবিতে সপ্তাহব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচী করছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচীর কথা জানান সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন।

দিবসের কর্মসূচিতে আরও ছিল, অফিসার সমিতি কার্যালয়ে আলোচনা সভা, বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে দোয়া মাহফিল, প্রদীপ প্রজ্বালন ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।


সর্বশেষ সংবাদ