বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

ভিসির স্বেচ্ছাচারিতায় অনিয়ম করে প্রমোশন বোর্ড, ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা

  © ফাইল ফটো

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে একজন শিক্ষককে অনিয়মের মাধ্যমে প্রমোশন দিতে সাক্ষাতকার সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষকের নাম জনি পারভীন। তিনি বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এই অনিয়মের বিষয়ে ভিসি নিজেই দায়ী বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে প্লানিং কমিটি গঠন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্লানিং কমিটিতে যে শিক্ষককে সদস্য বানানো হয়েছে সে শিক্ষক জানেনই না পদন্নোতি বোর্ডের বিষয়ে। এদিকে জনি পারভিনের সহকারী অধ্যাপক পদে স্থায়ীকরণ না করেই ভিসি নিজের মতো করে তৈরি করা প্ল্যানিং করে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে ঢাকার লিঁয়াজো অফিসে নিজের একক সিদ্ধান্তে তার সুপারিশের মাধ্যমে মাত্র একদিনের নোটিশে ওই শিক্ষকের সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার বোর্ড সম্পন্ন করেন। এতে ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ অন্যান্য শিক্ষকরা।

অর্থনীতি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম নিরব জানান, সহকারী অধ্যাপক জনি পারভীন শিক্ষা ছুটিতে ছিলেন। গত ডিসেম্বর মাসে অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোরশেদ হোসেন এর দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হলে কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তড়িঘড়ি করে ছুটিতে থাকা জনি পারভীনকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। ছুটি থেকে ফিরে বিভাগে যোগদান করানোর ক্ষেত্রে সুপারভাইজার কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোন অনুমতি না নিয়ে ভিসির একক সিদ্ধান্তে যোগদান করেন তিনি।

এদিকে বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে তিনজন শিক্ষকের সমন্বয়ে প্ল্যানিং কমিটি গঠনের কথা থাকলেও জনি পারভীন সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর নিয়ম ভঙ্গ করে প্ল্যানিং কমিটি তৈরি করেন যেখানে সদস্য বানানো হয় স্বয়ং ভিসিকে। সভাপতি ছাড়া বাকি একজন সদস্য হলেন প্রফেসর ড. মোরশেদ হোসেন। প্ল্যানিং কমিটি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন লাগে, সেটিও মানা হয়নি এখানে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংস্থাপন শাখা থেকে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি জনি পারভীন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে স্থায়ীকরণের আবেদন করলে পরের দিন ১৪ জানুয়ারিতেই ঢাকায় স্থায়ীকরণের সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী ওই সভার সুপারিশের প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট সভায় তার স্থায়ীকরণের বিষয়টি অনুমোদিত হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই জনি পারভীন আপগ্রেডেশন এর জন্য আবেদন করে নিজেই প্ল্যানিং কমিটির সভা ডেকে ভিসির যোগসাজশে সুপারিশ করার মাধ্যমে প্রশাসন বরাবর ফরোয়ার্ড করেন। অথচ নিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তার থাকার কথা নয়। অনিয়ম করে প্ল্যানিং কমিটি হওয়ায় তড়িঘড়ি করে ডাকা ওই সভায় যোগ দেননি ড. মোরশেদ। ফলে প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে শুধুমাত্র ভিসি ছাড়া অন্য কারও সুপারিশ থাকার কথা নয়। মাত্র একজন সদস্যের সুপারিশের ভিত্তিতে কিভাবে তার আবেদন ফরোয়ার্ড করা হয়েছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে।

অভিযুক্ত শিক্ষক জনি পারভিনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার বিভাগীয় অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে কল করা হলে প্রতিবেদককে এক হাত নেন তিনি। তিনি বলেন, আমি এসব কোন স্টুডেন্টদের মুখে শুনতে চাইনা। কিসের রিপোর্টার, অমুকের রিপোর্টার আর তমুকের রিপোর্টার? না, এ বিষয়ে আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাইনা। এসব বিষয়ে জানার ইচ্ছা হলে আপনি প্রশাসনকে ফোন করেন, আমাকে ফোন করেছেন কেন? আপনি আমার মোবাইল নাম্বার পেয়েছেন কোথায়? এটা আমার পার্সোনাল মোবাইল নাম্বার কোন অফিসিয়াল মোবাইল নাম্বার না। পার্সোনাল মোবাইল নাম্বারে আপনি কখনো অফিসিয়াল ইনফরমেশন নিতে পারেননা।

প্রতিবেদক নাম্বারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া ডায়রিতে পেয়েছে জানালে তিনি বলেন, ডায়রিতে যেটা দেওয়া আছে সেটা সবারই পার্সোনাল নাম্বার। বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ঐ পর্যায়ে যায়নি যে আপনার ইনস্টিটিউশনের কোন নাম্বার থাকবে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিম নেব তারপর আপনি আমাকে ফোন দেবেন এর আগে আমাকে ফোন দেবেন না। আপনাকে তথ্য দেওয়াটা আমার এখতিয়ারের মধ্যেও পড়েনা আপনার জানারও এখতিয়ারের মধ্যে পড়েনা।

একদিনের মধ্যে স্থায়ীকরণের বোর্ড এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই জনি পারভীনকে কিভাবে আবেদনের অনুমতি দেয়া হলো-এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এবং রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামালের সঙ্গে পরপর দুইদিন কথা বলতে তার দফতরে গেলে বিষয়টি সম্বন্ধে জানা যায়নি। জানা যায়, তারা দুজনেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন কেটে দেন তারা।