ইঞ্জিনিয়ারকে ৫ মিনিটে তুলে নেওয়ার হুমকি বেরোবি শিক্ষকের

জুবায়ের ইবনে তাহের
জুবায়ের ইবনে তাহের

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) লোক প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জুবায়ের ইবনে তাহের সহকারী প্রকৌশলী (পুর) কমলেশ চন্দ্র সরকারকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নিজ বিভাগ থেকে ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী পাঠিয়ে অপমান করার অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল রবিবার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী ইঞ্জিনিয়ার কমলেশ চন্দ্র সরকার।  আবেদনে তিনি জানান, রবিবার দুপুর ১২টায় লোকপ্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. জুবায়ের ইবনে তাহের ইন্টারকম ফোনের মাধ্যমে রুমে দূর্গন্ধ আসার অভিযোগ করেন।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই মুহুর্তেই প্লাম্বার মো. আইয়ুব আলী ও কেয়ারটেকার মো. জিয়াউর রহমানকে লোক প্রশাসন বিভাগে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা দেখতে পান, সেটা প্লাম্বিং সমস্যা নয়। সমস্যাটি পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক অর্থ্যাৎ কাজটি সুইপারদের। তাৎক্ষণিকভাবে সুইপারদের ডাকা হয়।

তখন সুইপার গোপেন বলেন, কাজটি আমি একাই কতে পারবনা। কাজটি করতে বাইরের একজন লোক আনতে হবে। সেসময় বিভাগীয় প্রধান জিআই তার ও কেরোসিন তেল ক্রয়ের জন্য দুশ’ টাকা প্রদান করেন।

এরপর প্লাম্বার মো. আইয়ুব আলী বিভাগীয় প্রধানকে বলেন, ইঞ্জিনিয়ার তাকে অন্য দপ্তরে কাজের জন্য ডেকেছেন। জিআই তার ও কেরোসিন তেল কেনা পর্যন্ত সে অন্য দপ্তরের কাজটি দেখে আসার জন্য যেতে চাইলে তাকে সেখানেই দাড়িয়ে থাকতে বলেন বিভাগীয় প্রধান।

এসময় তাকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেখানেই দাড়িয়ে থাকার জন্য নির্দেশ দিলে তাতে অস্বীকৃতি জানান প্লাম্বার আইয়ুব আলী। এসময় আমাকে (কমলেশ চন্দ্র সরকার) উত্তেজিত অবস্থায় ফোন দিয়ে অভিযোগ দিলে আমি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলি।

তখন তিনি আরো উত্তেজিত হয়ে আমাকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে তুলে নেওয়ার হুমকি প্রদান করেন এবং তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার বিভাগ থেকে ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী পাঠিয়ে দেন। এসময় প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা মো. হাফিজ আল আসাদ ও প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ তাদেরকে বিভাগে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তারা ফিরে যায়। এটাকে তার জন্য হুমকিস্বরুপ এবং অপমানজনক বলে উল্লেখ করেন কমলেশ।

এছাড়াও গতবছর ২৩ এপ্রিল লোক প্রশাসন বিভাগের ৩৭তম একাডেমিক সভা চলাকালে তার নিজ বিভাগের নারী শিক্ষক সামান্থা তামরিনকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য, আপত্তিকর ও অশোভন কথাবার্তা বলার অভিযোগ উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন সামান্থা তামরিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর অভিযুক্ত শিক্ষক জুবায়ের ইবনে তাহের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুল হাকিমের সাথে অশোভন আচরণ করেন। বিষয়টি নিয়ে গত বছর ১ অক্টোবর গণিত বিভাগের শিক্ষক আর এম হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু ওই শিক্ষকের প্রভাবের কারণে তদন্ত রিপোর্ট আজও আলোর মুখ দেখেনি।

এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক জুবায়ের ইবনে তাহেরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব সম্পর্কে কিছুই জানেননা বলে এড়িয়ে যান। পরে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র হতে পারে। তবে আমি যেটা শুনেছি যে, স্টুডেন্টরা বাথরুম অপরিষ্কারের বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরে অভিযোগ করতে গিয়েছিলো। এখানে আমাকে কীভাবে জড়ালো, এ নিয়েও ষড়যন্ত্রই হবে।

তবে হুমকির বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি একজন বিভাগীয় প্রধান আর সে আমার নিচের পদে অবস্থান করছে। তাকে তো আমি অর্ডার করলেই আমার অফিসে আসতে বাধ্য। তাই এধরণের কোন কথা বলার প্রশ্নই আসেনা। সে খুব সম্ভবত কোন একটা ষড়যন্ত্র করছে।’


সর্বশেষ সংবাদ