ছাত্রীকে যৌন হয়রানির পর সহকর্মীদের মানহানি সেই শিক্ষকের!

ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদার
ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদার

যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তুলে এবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছে একই বিভাগেরই দুই শিক্ষক। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরের কাছে এ অভিযোগ দেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহা. হাবিবুর রহমান ও সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আকবর হোসেন।

অভিযোগে বলা হয়, এক ছাত্রীর আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদার গত ১৯ জানুয়ারি কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে দুইজন শিক্ষককে জড়িয়ে মিথ্যা ও মানহনিকর বক্তব্য উপস্থাপন করায় এর তীব্র নিন্দা জানান। শিক্ষকদের জড়িয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রদান করায় তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়।

ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহা. হাবিবুর রহমান বলেন, কুমিল্লা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আমাদের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদার আমাকে জড়িয়ে পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া সংক্রান্ত একটি গুরুতর অভিযোগ করেন। যা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মোটেও সত্য নয়। এর ফলে আমি পারিবারিক, সামাজিক ও প্রতিষ্ঠানিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি। অথচ এ বিভাগীয় প্রধান নিজেই পরীক্ষার নম্বর জালিয়াতির অভিযোগে প্রশাসনিক শাস্তি পেয়েছেন।

অন্য এক অভিযোগ পত্রে সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, আমাদের বিভাগীয় প্রধান সংবাদ সম্মেলনে আমার বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর সাথে অনৈতিক, আপত্তিকর ও অশালীন ব্যবহার করি বলে তিনি অভিযোগ করেন। যা আমার জন্য খুবই অনাকাঙ্খিত, বেদনাদায়ক ও অসম্মানজনক। আমি মনে করি, ওই ছাত্রীর সাথে যদি আমি কোন অশোভন আচরণ করেও থাকি তবে বিভাগের সভাপতি আলী রেজওয়ান কেন এতোদিন চুপ ছিলেন। একটা দায়িত্বশীল পদে থেকে তিনি আমার সাথে বিষয়টা আলাপ করে দেখতে পারতেন বা আমাকে সতর্ক করতে পারতেন। আমার মনে হয়, নিজে বিপদে পড়ে বিভাগের সভাপতি এখন দিশেহারা হয়ে গেছেন এবং নিজেকে বাঁচানোর জন্য তিনি এমন ন্যাক্কারজনক কৌশল অবলম্বন করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘এখন কথা বলতে পারবো না। আপনি সামনে এসে কথা বলেন।’ বলে ফোন কেটে দেন। পরে সাক্ষাতের স্থান জানতে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘একজন বিভাগীয় প্রধান তার বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন না। দু’জন শিক্ষক অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি উপাচার্য মহোদয়ের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মোবাইল ফোনের গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য মুছে ফেলার অভিযোগ তুলে বিভাগটির সান্ধ্য কোর্সের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের পরিচালক ড. হাবিবুর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেল বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষক বিষয়টিকে বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদীত বলে বিভাগের এক শিক্ষককে এর মদদ দাতার অভিযোগ তুলে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে।

এদিকে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের অধিনে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী তদন্ত চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আলী রেজওয়ানকে সান্ধ্য কোর্সের সকল ধরনের কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ