ছাত্রীকে শয্যাসঙ্গী মন্তব্য করলেন ‘যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত’ শিক্ষক

অভিযুক্ত ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের সংবাদ সম্মেলন
অভিযুক্ত ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের সংবাদ সম্মেলন

যৌন হয়রানির অভিযোগের পর এবার অভিযোগ তুলে নিতে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এই শিক্ষক ওই ছাত্রীকে টাকার বিনিময়ে বড়লোকের ‘শয্যাসঙ্গী’ বলে উপস্থাপন করেন।

গতকাল রবিবার (১৯ জানুয়ারি) কুমিল্লা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবস্থান জানাতে গিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া এসব ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে আজ সোমবার কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন অভিযোগকারী শিক্ষার্থী।

জানা যায়, গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মোবাইল ফোনের গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য মুছে ফেলার অভিযোগ তুলে বিভাগটির সান্ধ্য কোর্সের এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় সে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের পরিচালক ড. হাবিবুর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেল বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে অভিযুক্ত শিক্ষক বিষয়টিকে বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিভাগের এক শিক্ষককে এর মদদ দাতার অভিযোগ তুলে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানীর অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে বলেন, ‘ওই ছাত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন, পরকীয়ায় আসক্ত, তিনি (ছাত্রী) টাকার বিনিময়ে বড়লোকের শয্যাসঙ্গী হয়।’ এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষক ঐ শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে এবং এসবের নেপথ্যে ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষকের ইন্ধন রয়েছে বলে নিজেকে নির্দোষ দাবী করেন।

পরবর্তীতে বিষয়টি জানা জানি হয়ে গেলে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক তার বন্ধু-বান্ধবসহ কুমিল্লার পরিচিতজনদের দিয়ে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে নানা ধরনের হুমকি প্রদান এবং শিক্ষকের সাথে সমঝোতার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। এমনকি তার পরিবার ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের কাছে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করে ওই শিক্ষার্থীকে সামাজিকভাবে হেয় করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থী জানান, ‘ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আমাকে বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানি এবং কু-প্রস্তাব দেওয়াতে আমি সাড়া না দেওয়ায় তার তথ্য আমার ফোন থেকে মুছে দেওয়ার জন্য ওঁত পেতে ছিল। তাই সে পরীক্ষার সময় সুকৌশলে আমার মোবাইল ফোনটি নিয়ে সেখান থেকে সব তথ্য মুছে দেয়। তাই আমি গত ১৫ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করি। এর পরে সে আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি এবং আমার ও আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের হয়রানি করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক নিজেকে বাঁচানোর জন্য এবং ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন উদ্দেশ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্যের পুরোটাই মিথ্যাচার। আমি আমার অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করছি এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি, যাতে আর কোন ছাত্রী ওই শিক্ষকের দ্বারা যৌন হয়রানীর শিকার না হয়। যদি অন্য কোনো শিক্ষকও এমন চরিত্রের হয়ে থাকে তারাও যাতে সাবধান হয়ে যায়।’

এদিকে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলের অধীনে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। যেখানে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুন নাহার শীলাকে আহবায়ক করে এক তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আলী রেজওয়ানকে সান্ধ্য কোর্সের সকল ধরনের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।

হুমকির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা। আমি এগুলো প্রত্যাখ্যান করছি। এর কোন বাস্তবতা নেই।’

একজন নারীকে প্রকাশ্যে বড়লোকের শয্যাসঙ্গী বলতে পারেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এ জন্যই বলতে পারি যে, সেই শিক্ষার্থী আমার বিরুদ্ধে এমন নোংরা অভিযোগ করেছে তার প্রেক্ষিতে। এটার ডকুমেন্টস আছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্য কোর্সে অধ্যয়নরত এক ছাত্রীর করা যৌন হয়রানির অভিযোগের ভিত্তিতে উপাচার্যের সাথে কথা বলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত শিক্ষকে সান্ধ্য কোর্সের সকল ধরনের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিব।’


সর্বশেষ সংবাদ