একলাফে তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা!

 ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

অনুমোদিত পদ নেই। কোনও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নেই। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের একলাফে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা বানিয়ে দেওয়ার পায়তারা চলছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনিয়মের আরও একটি বড় পুকুর চুরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।

ভাড়া বাড়িতে চলা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক কর্মকর্তাই চেয়ার টেবিল পাচ্ছেন না। নতুন করে আবারও নতুন করে নিয়োগের পায়তারা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। এরআগে বেশকিছু পদে নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে। উচ্চশিক্ষা তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনিয়মের তদন্ত করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগামীকাল রোববার ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরআগে বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে অবৈধভাবে ১৯ জনকে সর্বসাকূল্যে বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব পদে নিয়োগের জন্য ইউজিসি কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনও অনুমোদন নেই। মোটা অঙ্কের লেনদেনে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে জানা গেছে। তৃতীয় শ্রেণির এসব পদ থেকে এক লাফে প্রথম শ্রেণির পদ ‘সেকশন অফিসার’ পদে নিয়োগের জন্য রবিবারের সিন্ডিকেটের বৈঠকে বসছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সরকারি চাকুরি বিধি অনুযায়ী, তৃতীয় শ্রেণি থেকে সরাসরি প্রথম শ্রেণির কোনও পদে যাওয়া যায় না। কমপক্ষে তিন বছরের চাকুরির অভিজ্ঞতার পর পদোন্নতির বিধান রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানান, ৩-৫ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির নানান পদে কাজ করলেও তাদের পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেনে তৃতীয় শ্রেণি থেকে একলাফে প্রথম শ্রেণির পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষক নিয়োগেও অনিয়ম: এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যদেরও নানা সুবিধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ার সুবাধে নিজের মেয়ের চাকুরিও দিয়েছেন তারা। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদ্রাসায় ওই বিষয় না থাকলেও শিক্ষক নেওয়া হয়েছে। ওই সিন্ডিকেট সদস্যের পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয় যেনো ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। তার ছেলেকেও বিধি ভঙ্গ করে নিয়োগ দেওয়া হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তর গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারি চাকুরি বিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার নিয়োগ স্থায়ী করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরেকজন সিন্ডিকেট সদস্যের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মেয়েকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই কর্মকর্তাকে ওএসডি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য সিন্ডিকেট সদস্য পদে না থাকলেও ওপর মহল থেকে নানা চাপ প্রয়োগ করছেন তার মেয়ের চাকুরি স্থায়ীকরণে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেওয়া হয় না। বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এরআগে একই বিভাগের একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে নিয়োগ পাওয়া একজনকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রভাবশালী শিক্ষক ওই প্রভাষক।

ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। সেখানে উপ-রেজস্ট্রার আবু হানিফার নামে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। তার নানা অনিয়মের তদন্ত চলছে। সরকারি নিয়ম নীতি না মেনে তাকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির পাশে তার বিশাল অট্টালিকার আয়ের উৎসের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আগামীকাল আমাদের সিন্ডিকেট মিটিং হবে। যারা কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করে তাদের মধ্যে হয়তো কয়েকজন এটি ভেবে নিয়েছে যে তাদেরকে পদোন্নতি দেয়া হবে। তারাই বিষয়টি ছড়িয়েছে। ফলে যারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন তারা এই বিষয়টি সাংবাদিকদের সামনে নিয়ে এসেছেন। যেন আমাদের উপর একটি চাপ তৈরি করতে পারেন। আসলে এভাবে নিয়োগের কোন নিয়ম নেই। আমরা সবকিছু ইউজিসি এবং সরকারের নিয়ম অনুযায়ী করে থাকি।

অবৈধভাবে ১৯ জনকে নিয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করে উপাচার্য বলেন, ১৯ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জন পিয়ন পদে। তবে গত মাস থেকে তাদের বেত দেওয়া বন্ধ রয়েছে। আমাদের অর্থ বিভাগ জানিয়েছে তাদের বেতন দেয়া ঠিক হবে না।

উপ রেজিস্ট্রার আবু হানিফার দুর্নীতির বিষয়ে মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কিন্তু সেটার রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। রিপোর্ট হাতে আসার পর তারা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

অনেক কর্মকর্তাই বসার চেয়ার টেবিল পাচ্ছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি ভাড়া ক্যাম্পাসে চলে। ভাড়া ক্যাম্পাস হওয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে আমার জানামতে চেয়ার-টেবিলের সংকট নেই। আমি বিষয়টি দেখব।


সর্বশেষ সংবাদ