সান্ধ্য কোর্সের ছাত্রীকে যৌন হয়রানি শিক্ষকের

  © ফাইল ফটো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুবি) ইংরেজী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন ইংরেজী বিভাগের সান্ধ্য কোর্সে অধ্যায়নরত এক ছাত্রী। বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রাার ও ইংরেজি বিভাগের প্রোগ্রাম পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি ইংরেজী বিভাগের সান্ধ্য কোর্সর ৮ম ব্যাচের প্রথম ট্রাইমিস্টারের একটি কোর্সের পরীক্ষা দিতে বিভাগে আসেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। বিকেল সাড়ে ৫টায় পরীক্ষা শুরুর আগ মূহুর্তে বিভাগটির প্রধান মোবাইল সাথে না রেখে সবাইকে পরীক্ষা দিতে বলেন। বিষয়টি শুনে ওই ছাত্রী মোবাইলটি নিজের ব্যাগে রেখে আসেন। কিন্তু পরীক্ষা শেষে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখেন মোবাইলের সিম অদলবদল করা এবং মেমোরি কার্ডের জায়গায় নষ্ট একটি মেমোরি কার্ড লাগানো হয়েছে।

বিষয়টি জানার জন্য ওই শিক্ষককে ফোন করলে তিনি ফোন তুলেননি। তখন আমি বুঝতে পারি শিক্ষকের অনেক অনৈতিক প্রস্তাবে আমি রাজি না হওয়ার তথ্য এ মোবাইলে ছিলো। বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি অভিযোগ করি। অভিযোগগুলো হলো শিক্ষার্থীকে সরাসরি অনৈতিক প্রস্তাবের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভাগের নিজস্ব রুমে এমনকি শহরে তাহার নিজস্ব বাসায় যাওয়ার জন্য বলেছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হলে শিক্ষার্থীকে সান্ধকালীন কোর্স নিয়ে ভাবতে হবে না। ছাত্রী অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে অভিযুক্ত শিক্ষক ছাত্রীর মোবাইলে অনেক ডকুমেন্ট ছিল বিধায় সেই প্রমানগুলো নষ্ট করার জন্য কৌশলে মোবাইলটি নেয়া হয় বলে ধারনা করা হচ্ছে। এছাড়াও অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর পরিবার বিষয়টি নিয়ে সমস্যায় আছে বলে জানানো হয় অভিযোগে।

যৌন হয়রানির শিকার এ ছাত্রী জানান, বিভাগীয় প্রধান প্রথমে আমাকে সিআর হিসেবে নির্বাচন করে। বিভিন্ন সময় আমাকে রুমে ডাকতেন। এছাড়াও আমাকে ব্যক্তিগত রুমে ও শহরের বাসায় ডাকতেন। সেই সাথে বিভিন্নভাবে এড়িয়ে যেতাম। পরবর্তীতে আমাকে প্রলোভিত করার জন্য বিভিন্ন মেসেঞ্জার থেকে হোয়ার্টস অ্যাপে ডাকত ও ব্যক্তিগত অনেক কিছু বলতো। আমি তার বিষয়গুলোতে সাড়া না দেওয়ায় আমার ফোন থেকে সব নিয়ে মুছে দেয়। শিক্ষার্থী আরো জানান, ‘আমি এ বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সর্বোচ্চ বিচার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি করছি। আশা করছি প্রশাসন বিষয়টা আমলে নিবে।’

এর আগে অভিযুক্ত এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার খাতা দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে না পাঠিয়ে নিজেই দেখা ফেলার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইংরেজি বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘আমাদের এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও এক ছাত্রীর সাথে অসামাজিক কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক ও ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ আলী রেজওয়ান তালুকদার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ যেহেতু দেওয়া হয়েছে তা প্রমাণ করার বিষয়। প্রমাণ করলে বিষয়টি বুঝা যাবে।’

অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইংরেজি বিভাগের প্রোগ্রাম পরিচালক ড. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। প্রোগ্রামের সাথে যারা আছেন সবাইকে নিয়ে বসে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার(অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পেয়েছি। উপাচার্যের সাথে আমি কথা বলেছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ