পথচারী নারীকে ‘হিজড়া’ বলে মারধর ছাত্রলীগ নেত্রীদের

(বাঁ থেকে) ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী সুষ্মিতা বারৈ, নদী সাহা ও সোনালী আক্তার
(বাঁ থেকে) ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী সুষ্মিতা বারৈ, নদী সাহা ও সোনালী আক্তার  © টিডিসি ফটো

ইডেন মহিলা কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক নারী। ওই নারীকে হিজড়া বলে ডাকার প্রতিবাদ করায় ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেত্রী তাকে বেধড়ক মারধর করে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন তিনি। 

গতকাল মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে কলেজটির বিপরীতে ফুড কর্নারের সামনে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- সুষ্মিতা বারৈ, সোনালী আক্তার ও নদী সাহা (জ্যোতি)। ভুক্তভোগী ও হামলার শিকার ওই নারীর নাম ফাহমিদা (ছদ্মনাম)।

মারধরের সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা দলীয় পরিচয় উল্লেখ করে হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করেন ফাহমিদা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কী করা হয়েছে, কেউ না দেখলে তা বুঝতে পারবেন না। আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম, ওরা তিনজন আমাকে দেখে বলে দেখ ‘হিজড়া’ যাচ্ছে। ‘তখন আমি প্রতিবাদ করি। এটাই ছিল আমার অপরাধ। ‘আমরা লেখক (ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য) দাদার লোক’ বলেই আমার ওপর তারা হামলা করে। আমাকে বেধরক মারধর করা হয়।’

এ ঘটনা উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন ফাহমিদা (ছদ্মনাম)। তিনি লিখেছেন, ‘আমি ফাহমিদা (ছদ্মনাম) ...ইডেন কলেজের সামনে কলোনি দিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলাম। তখন একটা মেয়ে আমাকে ‘হিজড়া’ বলে ডাক দেয়, তখন আমি তার কাছে বললাম— আপনি আমাকে হিজড়া বললেন কেনো? তখন তার সঙ্গে থাকা মেয়েরাসহ আমার দিকে তেড়ে আসে, এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।’

তিনি লিখেন, ‘আমি যখন বলি আপনারা এই রকম ব্যবহার কেন করছেন...তখন বলে আমরা ইডেন কলেজে পড়ি, ছাত্রলীগ করি, লেখক দার (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) সঙ্গে রাজনীতি করি, এই বলে আমাকে গালাগালি আর মারধর করে চুল ধরে একে অপরের নাম নেয়, তখন আমি ওদের নাম শুনতে পাই। ওরা ছিল সুষ্মিতা বাড়ই, সোনালী আক্তার এবং জ্যোতি সাহা।’

তিনি ফেসবুকে আরও বলেন, ওরা আমাকে মারতে মারতে মাটিতে শুয়ে ফেলে এবং আমার ওড়না টেনে ফেলে দেয়, আমাকে বিবস্ত্র করে ফেলে..... বলে পোলাপাই ডাক ওরে মাইরা ফেল.... কেউ আমাকে বাঁচাতে আসেনি....এটা কি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, যে দেশের একটি সাধারণ মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে পারবে না।জাতির কাছে প্রশ্ন...!!!! আজ আমি একা বলে বিচার পেলাম না.....বিচার চাই.....".

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আমরা কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে সেখানে আড্ডা দিচ্ছিলাম, তখন দেখি কয়েকটি মেয়ের মধ্যে হাতাহাতি হচ্ছে। পরে অনেক লোক সেখানে জড়ো হতে থাকে।

এ ঘটনা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে হামলাকারীদের একজন সুষ্মিতা ফাহমিদাকে কল দিয়ে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে কাউকে না জানাতে সুস্মিতা অনুরোধ করেন বলেও জানান ফাহমিদা। এই হামলার ঘটনা ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় তা মুছে দিতেও হুমকি আসছে বলে জানালেন ফাহমিদা।

সুস্মিতা বারৈ বলেন, আমরা বান্ধবীরা কলেজের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এসময় এক বান্ধবী আরেক বান্ধবীকে মজা করে বলছিল, এই তোকে আজ হিজড়াদের মত লাগছে। এই সময় ওই নারী পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। উনি এসে বলেন— থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেব। তখন আমরা বললাম আপনি থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিবেন কেন? তখন তিনি বলেন, আমরা নাকি তাকে হিজড়া বলেছি। এ নিয়ে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে লেখক দাদা (ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক) আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান।

‘লেখক দাদাকে বিস্তারিত বলার পর দাদা ওই নারীর ফোন নম্বর আমাকে দেন। পরে আমি তার কাছে ফোন দিয়ে সরি বলেছি।’