উপাচার্য ফারজানার ২২৪ পৃষ্ঠার ‘দুর্নীতির খতিয়ান’ প্রকাশ

সংবাদ সম্মেলন
সংবাদ সম্মেলন  © টিডিসি ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে ২২৪ পৃষ্ঠার ‘দুর্নীতির খতিয়ান’ প্রকাশ করেছে আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরে’র ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ খতিয়ানটি প্রকাশ করে।

কালো প্রচ্ছদের এ খতিয়ানে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১১টি খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার নানা তথ্য-চিত্রসহ অন্তত ৭৫টি দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। এছাড়া খতিয়ানে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দুর্নীতিবিরোধী ৭ ইশতেহার প্রস্তাব করেছে আন্দোলনকারীরা।

খতিয়ান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন সংক্রান্ত, টেন্ডার সংক্রান্ত, ঠিকাদার নিয়োগ, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, প্রকল্পে অর্থ বিষয়ক, প্রকল্পের বাস্তবায়ন, বাস্তবায়নে আর্থিক অনিয়ম ও হিসাব সংরক্ষণ, সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ নিয়ে উপাচার্যের মিথ্যাচার, মিথ্যা মামলা এবং আন্দোলনকারীদের উপর হামলায় প্রত্যক্ষ মদদ, অতীতের দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচার; ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং এন্ড জিআইএস-এ অনিয়ম, ইনস্টিটিউট অব আইআইটিতে অনিয়মসহ মোট ১১টি ক্ষেত্রে এ দুর্নীতির অভিযোগগুলি করা হয়।

খতিয়ানটি ভূমিকা; আন্দোলনেরন ইতিবৃত্ত; অপরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যানের সংকট; উপাচার্যের দুর্নীতির পূর্বাপর; আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার বৃত্তান্ত; বিভিন্ন সময় দেয়া স্মারকলিপি, লিফলেট, সংবাদ ববিৃতি; আচার্যের কাছে খোলা চিঠি, সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদন; কার্টুন, গ্রফিতি, পেইন্টিং ও স্থিরচিত্র; আন্দোলনের ক্রমপঞ্জি; দুর্নীতিবিরোধী ইশতেহারসহ মোট ১২টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত।

সংবাদ সম্মেলনে সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি মুশফিক উস সালেহীনের সঞ্চালনায় আন্দোলনের সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন ‘দুর্নীতির খতিয়ান’ প্রকাশনায় ‘ভূমিকা’ পাঠ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান এই আন্দোলন দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের অপসারণের মধ্য দিয়ে আগামী দিনে দুর্নীতিগ্রস্থ পথ পরিবর্তনের সুগম করবে।’

‘উপাচার্যের দুর্নীতির পূর্বাপর’ অংশটি পাঠকালে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, ‘উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম নিয়মিত সব অনিয়ম করে যাচ্ছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য একটা বড় বাজেট আসার পরেই উপাচার্যের আসল রুপ বেরিয়ে পড়ে। যখন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তখনি তিনি হামলা মামলা দিয়েছেন। গত ৫ নভেম্বরে উপাচার্যের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের এক অংশের হামলার পর উপাচার্য তার পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।’ এ সময় তিনি উন্নয়ন প্রকল্পে উপাচার্যের আর্থিক দুর্নীতি, টেন্ডারে অনিয়ম, উপাচার্যের অতীত দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা এবং আন্দোলনকারীদের উপর উপাচার্যের ‘নির্দেশে’ ছাত্রলীগের হামলার নানান তথ্য তুলে ধরেন।

ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ ‘দুর্নীতিবিরোধী ইশতেহার’ পাঠকালে বলেন, ‘আন্দোলনের বর্তমান এক দফা দাবি হলো দুর্নীতিগ্রস্থ উপাচার্যের অপসারণ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর কোন উপাচার্য পতনের আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম না বরং উপাচার্যের অপসারণ আন্দোলনের একটি বিশেষ স্তরে আন্দোলনের মধ্যে থেকে উঠে আসা সর্বাত্মক কর্মসূচি মাত্র।’

এছাড়া তিনি ইশতেহার উল্লেখ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত প্রশাসনিক, একাডেমিক ও উন্নয়ন কর্মকা-ের অর্থনতিক হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করা, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, সংশোধন এবং যে কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়নে সকল অংশীজনের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ করা, উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা আনা, পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন করা, ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে সিনেট পূর্ণাঙ্গ করা, সমস্ত বাণিজ্যিক কোর্স এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনার বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক খবির উদ্দিন, অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদার, অধ্যাপক তারেক রেজা, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ প্রমুখ। এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে গত ৫ই নভেম্বরে আন্দোলনকারীদের ওপর উপাচার্যপন্থী ছাত্রলীগ ও কর্মচারীদের হামলার স্থিরচিত্র প্রদর্শন ও গণসংযোগ করবে আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও ১২ই ডিসেম্বর মেয়েদের তিনটি হল নির্মাণে দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের লক্ষ্যে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এরপর থেকে মাস্টারপ্ল্যানের পুনর্বিন্যাস, টেন্ডারে আহ্বানে অস্বচ্ছতাসহ নানা অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। পরবর্তীতে নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে উপাচার্য অপসারণের এক দাবিতে আসেন আন্দোলনকারীরা। আর এ দাবিতে গত ৪ নভেম্বরে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে তার বাসভবনে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের একটি অংশ হামলা চালায় আন্দোলনকারীদের উপর। এ হামলায় শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কতৃপক্ষ।


সর্বশেষ সংবাদ