নির্জন ক্যাম্পাস মুখরিত অতিথি পাখিতে

অতিথি পাখি
অতিথি পাখি  © টিডিসি ফটো

চলমান আন্দোলনের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে লাল ইমারতের ক্যাম্পাস। আন্দোলনকারীরা সাত দিনের বিরতিতে। নির্জনতার অসুর করেছে হল গুলোতে। আকাশ দেখে হেমন্তের রেশ বোঝার উপায় নেই। সন্ধ্যা নামলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় গা ছমছম করে উঠে। পরিবেশের সাথে খাপ-খাইয়ে শীতও নেমেছে হেমন্তের মাঝামাঝিতে। যেন ক্যাম্পাসের সামগ্রিক সংকট প্রকৃতির ওপরেও ভর করেছে।

কিন্তু না, প্রকৃতির রানী অস্থির চিত্ত ধারণ করলেও তার সত্তা হারায়নি। তাইতো রাজ সত্তায় শীতের অতিথিদের আপ্যায়ন করতে এতটুকুও কার্পন্য হয়নি। বলছিলাম ঢাকার অদূরে নৈস্বর্গিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং অতিথি পাখির কলতানের গল্প কথা। যেখানে নেই ঢাকার যান্ত্রিকতা, ধুলোবালি আছে শুধু প্রকৃতির মায়া। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন লেকের মাঝে লাল শাপলা ও দূরবর্তী পরিযায়ীর জলকেলি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি লেকের মধ্যে প্রধানত চারটি লেকে পরিযায়ী পাখি আশ্রয় নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক, পরিবহন চত্বর সংলগ্ন লেক, বোটানিক্যাল গার্ডেনের পার্শবর্তী ওয়ার্ল্ড রেসকিউ সেন্টারের লেক চারটি ইজারামুক্ত রয়েছে। ফলে এই লেকগুলোতে অতিথি পাখিদের বিচরণ অনিন্দ্য।’ জলাশয়গুলোতে আশ্রিত পাখিকুলের মধ্যে রয়েছে সাধারণত সরাল, পিচার্ড, গার্গেনি, মুরগ্যাধি, মানিকজোড়, কলাই, নাকতা, জলপিপি, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতা টুপি, লাল গুড়গুটি। এদের বেশীরভাগই হাস জাতীয় ছোট সরালি পাখি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম ক্যাম্পাসে অতিথি পাখি আসে। বর্তমানে ১২৬টি দেশীয় ও ৬৯টি বিদেশী প্রজাতি মিলিয়ে মোট ১৯৫ প্রজাতির অতিথি ও পরিযায়ী পাখি ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে আশ্রয় নেই। এদের মধ্যে দেশীয় ৭৮টি প্রজাতি ক্যাম্পাসে নিয়মিত বাসা বাধে। সেপ্টম্বর থেকেই অতিথি পাখিদের কিছু ডাঙ্গায় শুষ্কস্থানে এবং কিছু পাখি লেকের পানিতে আশ্রয় নেয়। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাজি থেকে মধ্য জানুয়ারী পর্যন্ত সর্বো”চ সংখ্যক অতিথি পাখি সাইবেরিয়া, চীনের জিনজিয়াং, মঙ্গোলিয়া, নেপাল হতে আসে। কারন ঐসময়ে সেসব স্থানে প্রচুর তুষারপাত হয়ে থাকে। দেশের হাওড় অঞ্চল থেকেও নিরাপদ আবাসস্থল ও খাদ্যের জন্য পরিযায়ী পাখিরা আসে। এছাড়া প্রতিবছর জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে পাখি মেলার আয়োজন করে থাকে বিশ্বিবিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।

‘বার্ডস অব জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস’ বইয়ের লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রণীবিদ্যা বিভারে অধ্যাপক কামরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত ৫ই সেপ্টম্বর ক্যাম্পাসের চারটি লেকে প্রথম পরিযায়ী পাখির আগমন লক্ষ্য করি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো অতিথি পাখিদের নিরাপদ রাখার জন্য লেকগুলো পরিষ্কার, তীরগুলোকে সংস্কার করা হয়েছে। এখন দর্শনার্থীদের চাপ কম রয়েছে। তবে সচেতনতার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই ক্যাম্পাস পাখিদের জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল।’

পাখি মেলা আয়োজনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জানুয়ারী মাসের শুরুতে যেকোন শুক্রবারে পাখি মেলার আয়োজন করা হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ