চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সুবর্ণ জয়ন্তী হবে দুদিনব্যাপী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রবীণ বিভাগগুলোর মধ্যে অন্যতম সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ। প্রতিষ্ঠার দিক থেকেও বিভাগটি সমাজবিজ্ঞান অনুষদের দ্বিতীয় বিভাগ। ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রতিষ্ঠার দুই বছর পরেই ১৯৬৮ সালে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা।

১৯৬৯-৭০ শিক্ষাবর্ষে এই বিভাগে প্রথম স্নাতক কোর্স চালু হয়। বিভাগটির প্রতিষ্ঠাকালিন প্রধান ও প্রথম সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী তিনিই ছিলেন প্রথম কোনো বিভাগের সভাপতি। তিনি ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

২০১৮ সালে বিভাগটির ৫০ পছরের যাত্রা পূর্ণ হয়। এ উপলক্ষে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের তোড়জোড় শুরু হলেও জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য অনিবার্য কারণে বড় পরিসরে এই উদযাপন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটি। তবে সীমিত পরিসরে বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২০১৮ সালেই একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সূচনা করা হয়েছিলো।

তবে এবার বড় পরিসরে বিভাগের ৫০বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের কথা জানিয়েছেন বিভাগটি। দুই দিনব্যাপী জমকালো এই আয়োজন ২০২০ সালের ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় চবির রাজনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড.আনোয়ারা বেগমের অফিস কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এসময় সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন সংক্রান্ত বিষয়গুলো লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড.মুস্তাফিজুর রহমান।

এদিকে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের পূর্বে আগামী ২১ জানুয়ারি একটি আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার করার কথা রয়েছে বিভাগটির। তবে সেমিনারটি আন্তর্জাতিক নাকি জাতীয় মানের হবে সেই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন কমিটি।

সুবর্ণ জয়ন্তীর নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর। যা চলবে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনলাইন এবং অফলাইন দুই মাধ্যমেই রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের বাহিরেও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিবন্ধন স্পট রাখা হবে জানিয়েছেন কমিটি। এছাড়াও নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম, সুবর্ণ জয়ন্তীর স্থান ও সময়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই জানিয়ে দেয়া হবে।

এদিকে প্রাথমিকভাবে সুবর্ণ জয়ন্তীতে অংশগ্রহণের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। যাদের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ২৫০০ টাকা। তবে দম্পতিদের জন্য ৩,৫০০ টাকা। এছাড়া ড্রাইভার, সহকারী বা এই সংশ্লিষ্টদের জন্য জনপ্রতি ১,০০০ টাকা। পাচ বছর কিংবা এর উপরের বাচ্চাদের জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা। ৫ বছরের নিচের শিশুদের কোন ফি রাখা হয়নি।

তবে বর্তমান শিক্ষার্থী ও সম্প্রতি স্নাতকোত্তর শেষ করা ৪৮ ও ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য ফি নির্ধারণের বিষয়টি এখনো বিবেচনাধিন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক দিক বিবেচনা করে এই ফি নির্ধারণ করা হবে জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরাও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রথমদিন ৬ ফেব্রুয়ারী একটি আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে সুবর্ণ জয়ন্তীর কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে আলোচনা পর্ব এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব রাখা হয়েছে। প্রথমদিন কালচারাল অনুষ্ঠানের পরিবেশনায় থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বিতীয় দিন সংবর্ধণার আয়োজন করা হবে। এতে বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব জায়গা থেকে বিভিন্ন সফল্যের জন্য সংবর্ধণা প্রদান করা হবে। এদিন কালচারাল অনুষ্ঠানে দেশের নামীদামি শিল্পীদের অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

এদিকে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির আহ্বায়ক বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম, সদস্য সচিব অধ্যাপক ড.মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.মোঃ এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী, যুগ্ম সদস্য সচিব- সহযোগী অধ্যাপক এ জি এম নিয়াজ উদ্দিন এবং কোষাধ্যক্ষ সহকারী অধ্যাপক মোঃ বখতেয়ার উদ্দীন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উক্ত বিভাগের অধ্যাপক ড. ভূঁইয়া মোঃ মনোয়ার কবির, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এবং অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহফুজুল হক।

এছাড়াও সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ১৫টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বিভাগের অন্য শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এবং এ উপলক্ষে গঠিত লিয়াজোঁ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বেশ কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে।

প্রসঙ্গত, উক্ত বিভাগের অধীনে রয়েছে পিএইচডি, এমফিল, মাস্টার্স (এমএসএস) অনার্স (বিএসসি)।২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে এই বিভাগ থেকে ১ জন শিক্ষার্থী পিএইচডি ও ৪জন শিক্ষার্থী এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও উক্ত বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছে অনেক গবেষক ও স্কলার্স।


সর্বশেষ সংবাদ