রাবিতে বহিষ্কৃত দুই ছাত্রলীগ নেতার পক্ষে মানববন্ধন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী সোহরাব মিয়াকে মারধরের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যাচেষ্টার মামলার আসামীদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে কিছু শিক্ষার্থী। সোমবার দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দুই আসামীর বাংলা ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধন করে।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আরিফ বিল্লাহর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ছাত্রলীগ কর্মী আকরাম হোসেন, নবাব আব্দুল লতিফ হলের ছাত্রলীগ কর্মী রুহুল আমিন, মশিউর রহমান ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আবদুল কাদের জিলানী। মানববন্ধন শেষে তারা ছয় দফা দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাকে চিঠি দেন।

দাবিগুলো হলো, বহিষ্কারাদের প্রত্যাহার, ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্ত, হলে বহিরাগতদের মাদক নিয়ে আড্ডা বন্ধ করা, ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার মূল হোতাদের চিহিৃত করে শাস্তি দাবি, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকল দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত ও  এক পক্ষের তথ্য নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়া।

মানববন্ধনে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও জোহা হল ছাত্রলীগের কর্মী আকরাম হোসেন বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসন তার তদন্ত না করে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে। সেদিন সোহরাবসহ বহিরাগত ছয়জন গাঁজা সেবন করছিল। গণমাধ্যমে শুধু মারধরের ঘটনা প্রকাশ করা হয়েছে। তার কারণ প্রকাশ করা হয়নি। আর তার (সোহরাব) তিন জায়গায় ১৫টি সেলাইয়ের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তার সেলাই লেগেছে এক জায়গায়।

এদিকে মারধরের ঘটনায় রোববার দুই ছাত্রলীগ নেতা র্ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাকিবুল ইসলাম আসিফ লাক এবং বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. হুমায়ুন কবির নাহিদকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এম এ বারী সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সিন্ডিকেট সদস্য ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীরকে সভাপতি ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তদন্ত কমিটির অন্যান্যরা হলেন, সিন্ডিকেট সদস্য ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. জুলকার নায়েন ও সহকারী প্রক্টর ড. মো. হাসানুর রহমান। বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে গত শুক্রবার মধ্যরাতে সোহরাব হোসেনকে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ২৫৪ নাম্বার রুমে ডেকে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগকর্মী রাকিবুল ইসলাম (আসিফ লাক) ও হুমায়ুন কবির নাহিদ। মারধরে সোহরাবের মাথা ফেটে যায়। সোহোরাব রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এ ঘটনায় পরদিন শনিবার ভূক্তভোগী সোহরাব হোসেন নিজে বাদী হয়ে রাকিবুল ইসলাম ওরফে আসিফ লাক, হুমায়ুন কবির নাহিদ এবং আকিবুল ইসলাম রিফাতের নাম উল্লেখ করে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। সেদিন বিকেলে আকিবুর ইসলাম রিফাতকে গ্রেফতারের পর জেলহাজতে প্রেরণ করে মতিহার থানা পুলিশ।

বাকিদের গ্রেফতার বিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ওই দুই আসামী এখন রাজশাহীর বাইরে অবস্থান করছে বলে জেনেছি। তার গ্রেফতারের জন্য পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

এদিকে রোববার শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবন অবরোধ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান সেখানে অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্তদের বহিষ্কারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এবং এ ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ