চবির দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন ভর্তি বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

সম্প্রতি ক্যাম্পাসে আন্দোলনে নেমেছিলেন তারা
সম্প্রতি ক্যাম্পাসে আন্দোলনে নেমেছিলেন তারা  © ফাইল ফটো

লিখিত অভিযোগ জমা দিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৬টি দপ্তরে ঘুরেছেন ২০ থেকে ২৫ জন ভুক্তভোগী ভর্তি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। যাদের কেউ পরীক্ষায় নাম্বার কম পেয়েছেন, আবার কেউ ফলাফল থেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘুরেও কোনো বিহিত হয়নি তাদের।

জানা যায়, চবির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা। ফলাফল না পাওয়া, মানোন্নয়ন দিয়ে মেধা তালিকায় থেকেও ভর্তি হতে না পারা এবং নাম্বার কম পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এবারের ভর্তি পরীক্ষায়। এদিকে গত ৩ নভেম্বর থেকে মানোন্নয়ন দিয়ে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া প্রায় ৪০০ জন শিক্ষার্থী আন্দোলন করে আসছে। কখনো অবস্থান কর্মসূচি, কখনো মানববন্ধন আবার কখনো অভিযোগ পত্র জমা দিয়ে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছেন তারা।

সর্বশেষ ১১ নভেম্বর ভর্তিচ্ছুদের এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন ছাত্র সংগঠনগুলো। সে সময় কতৃপক্ষ জানিয়েছিলেন এসব শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক পক্রিয়ায় বিষয় পছন্দ করতে পারবেন এবং বাকীটা প্রক্রিয়া অনুযায়ী করা হবে। কিন্তু গত ১৪ নভেম্বর শুরু হওয়া বিষয় পছন্দের ক্ষেত্রে ঐ শিক্ষার্থীদের বিষয় পছন্দের অপশন বন্ধ করে দিয়েছে কতৃপক্ষ। ফলে শেষ আশাটুকুও হারিয়ে গেছে তাদের।

এ বিষয়ে সাকিব আহমেদ নামের মানোন্নয়ন দেয়া এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসন তাদের কথা রাখেনি। আমাদেরকে ভুল আশ্বাস দিয়ে এতদিন ঘুরিয়েছিল তারা। আমরা প্রয়োজনে আদালতে রিট করার সিদ্ধান্ত নিবো।

এদিকে, গত ১৪ নভেম্বর ডি ইউনিটে নাম্বার কম পাওয়ার লিখিত অভিযোগ দিতে গিয়ে ফিরে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী। পরে ১৭ নভেম্বর পুনরায় ডি ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুকের নিকট অভিযোগ পত্র নিয়ে যান তারা। এসময় তিনি সরাসরি অভিযোগ পত্র প্রত্যাহার করেন। উপায় উপক্রম না পেয়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার এস এম আকবর হোসাইনের কাছে যান তারা। সেখান থেকেও কিছু করার নেই বলে ফিরিয়ে দেয়া হয় তাদেরকে।

এরপর তারা গিয়েছিলেন আইসিটি সেলের প্রধান অধ্যাপক হানিফ সিদ্দিকীর কাছে। তিনি জানালেন, ফলাফল প্রকাশ করা ছাড়া তার হাতে আর কোনো কিছু নেই। এরপর তারা গিয়েছিলেন প্রক্টরের নিকট। কতৃপক্ষের নিকট অভিযোগ পত্রটি পৌঁছানোর জন্য প্রক্টরের নিকট লিখিত অভিযোগটি জমা দিয়ে এসেছেন সেখানে। উক্ত অভিযোগ পত্রে যথাযথ নাম্বার না পাওয়া ২৭ জন শিক্ষার্থী তাদের পরীক্ষার রোল নাম্বারসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য জমা দেন।

এরপর সর্বশেষ উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বরাবর ফলাফল পুনঃ নিরীক্ষার আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন এসকল শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাকরা। কিন্তু তাদেরকে উপাচার্যের অভিসের ভেতরেই যেতে দেওয়া হয়নি। উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এরপর তারা ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহের নিকট আবেদনটি নিয়ে গিয়েছিলেন। এ বিষয়ে নিজের প্রশাসনিক কোনো ক্ষমতা নেই বলেন জানান তিনি। তবে ব্যক্তিগতভাবে উপাচার্যের নিকট তাদের বিষয়ে বলবেন বলে আশ্বস্ত করা হয় তাদের।

এর আগে ২০১৫ সালে ‘বি-১’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের একটি সেটের উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়েও একই অভিযোগ উঠেছিল। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে ফের উত্তরপত্র মূল্যায়নের পর সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে প্রথমবারের তুলনায় প্রায় এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল সংশোধিত ফলাফলে। জানা যায়, উত্তরপত্রগুলো মূল্যায়নের আগে কম্পিউটারে সঠিক উত্তরপত্রের নির্দেশনা দেয়া হয়। কম্পিউটারে ভুল নির্দেশনা দেয়ার কারণে ২০১৫ সালের বি-১ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এই সমস্যা হয়েছিল।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর একজন অভিভাবক আরিফুল ইসলাম ইরফান বলেন, কতৃপক্ষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে দায়সারা ভাব দেখেছি। সবাই আমাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন। অথচ নিজেদের ভুলটা তারা স্বীকার করতেও নারাজ। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এস এম মনিরুল ইসলাম বলেন, তারা অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছে। আমি তাদের সাথে কথা বলেছি। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিবো আমরা।


সর্বশেষ সংবাদ