প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সাজে চবি, সাফল্য আর অর্জনের ৫৩ বছর

  © টিডিসি ফটো

আয়তনে বর্তমান বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ২৩শত একরের বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর পথচলা শুরু হয় এই বিদ্যাপীঠের। দেখতে দেখতে ৫৪ বছরে পা দিয়েছে প্রকৃতির অনিন্দ্য সৌন্দর্য মণ্ডিত এই ক্যাম্পাস। পিছনে ফেলে আসা ৫৩ বছরে নিজের ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে অনেক অর্জন আর সাফল্যের গল্প। এই ক্যাম্পাসেই জন্ম হয়েছে কত গুণীজনের।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রঙ্গিন সাজে সেজেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ভবন ও স্থাপনা। সোমবার (১৮ নভেম্বর) বেলা পোঁনে ১১ টায় এই উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার থেকে বঙ্গবন্ধু চত্বর পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। এতে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরই মাধ্যমেই শেষ হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কার্যক্রম।

কত কীর্তিমান এই বিদ্যাপীঠে ছড়িয়েছেন জ্ঞানের আলো। উপমহাদেশের খ্যাতিমান ভৌত বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস, সৈয়দ আলী আহসান, মুর্তজা বশীর, ঢালী আল মামুন, অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আবুল ফজল, আলাউদ্দিন আল আজাদ, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নানসহ অনেক গুণী শিক্ষকের হাতে গড়ে উঠেছে কত জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। রসায়ন বিভাগের ছাত্র তথ্য মন্ত্রী হাসান মাহমুদ। এছাড়া সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পদে রয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে ব্যাঙের নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করে সর্বকনিষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন চবির সাবেক ছাত্র সাজিদ আলী হাওলাদার, সাফ গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী মাহফুজা খাতুন শিলা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন।

এছাড়া সম্প্রতি গুগলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেয়া সুমিত সাহা এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে চবির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র শাখাওয়াত হোসেন ও তার দলের নাম ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র পৃথিবীতে। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা ও বিতর্ক অঙ্গনে এখানকার শিক্ষার্থীদের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।

৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের ক্রান্তিলগ্নে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ- মহান মুক্তিযুদ্ধে চবির ১৫ জন শিক্ষক শিক্ষার্থী তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন শহীদ মো. হোসেন।

এখানেই শেষ নয়, কম খরচে সমুদ্র পানি সুপেয় করার পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য শিক্ষক ড. শেখ আফতাব উদ্দিন কুড়িয়েছেন জনপ্রিয়তা, বঙ্গোপসাগর নিয়ে মানচিত্র তৈরি করেছিলেন অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান চৌধুরী, ড. মো শাহাদাত হোসেনের নতুন মাছের প্রজাতি আবিষ্কার ও শনাক্তকরণ এবং প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী রক্ষা ও গবেষণায় অবদানের জন্য শিক্ষক মনজুরুল কিবরিয়া পেয়েছেন দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সম্মাননা পুরস্কার।

যে বিশ্ববিদ্যালয়টি ৫৩ বছর আগে মাত্র চারটি বিভাগ নিয়ে চালু হয়েছিলো সেখানে এখন ৪৮টি বিভাগ ও ৭টি ইনস্টিটিউটের সমৃদ্ধ এক বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি দেশের সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যেও রয়েছে চবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। দেশ-বিদেশি দুষ্প্রাপ্য সাময়িকী, পত্র-পত্রিকা, জার্নাল ও পান্ডুলিপিসহ ৪ লক্ষাধিক বইয়ের বিশাল সংগ্রহশালা এই গ্রন্থাগার। আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জাদুঘর। সেখানেও রয়েছে প্রাচীন অনেক নিদর্শন ও দুর্লভ বস্তুর সংগ্রহ।

আছে রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজের আদলে তৈরী দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত সেতু। সেখানে দোল খায় নবীন প্রবীণ সকলেই। আছে ঝরণা ও লেক, ক্যাম্পাসজুড়ে পাহাড়গুলোতে রয়েছে আড়াই শতাধিক বৃক্ষের সংগ্রহশালা। আবার এই প্রকৃতির টানেই এখানে মৌসুমি বা স্থায়ীভাবে বসবাস ১৯২ প্রজাতির পাখি। আছে হরিণ, বন্য শুয়োর, বনবিড়াল, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। এছাড়াও আগামী ৫ বছরের মধ্যে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে ৪০০ প্রজাতির বৃক্ষের সংগ্রহশালা।

রয়েছে মনোমুগ্ধকর ও ঐতিহ্যের সব স্থাপনা। স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, স্মৃতিস্তম্ভ ‘স্মরণ’ “বঙ্গবন্ধু চত্বর’’ বুদ্ধিজীবী চত্বর, প্যাগোডা এবং মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য ‘জয় বাংলা’। রয়েছে পৃথিবীর একমাত্র শাটল ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থাপনা।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সত্য-সুন্দর আর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার তীর্থস্থান হলো বিশ্ববিদ্যালয়। সৎ, যোগ্য ও বহুমাত্রিক দক্ষতা সম্পন্ন আলোকিত মানব সম্পদ উৎপাদনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম লক্ষ্য। গবেষণার অধিকতর মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।


সর্বশেষ সংবাদ