রাবি শিক্ষার্থীকে রক্তাক্তের ঘটনা তদন্তে ছাত্রলীগের বিতর্কিতরা

ডানে সাব্বির এবং বামে বৃত্ত
ডানে সাব্বির এবং বামে বৃত্ত  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সোহরাব মিয়াকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শাখা ছাত্রলীগ। শনিবার দুপুরে শাখা ছাত্রলীগ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে। তদন্তক মিটির ৪ সদস্য হলেন, সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন, সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. সাব্বির হোসেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু। তবে বিতর্কিতদের নিয়েই এ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শিক্ষার্থীকে মারধর, চাাঁদাবাজিসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে যাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পত্রিকায় সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন তারাই আবার নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে নেমেছেন। তারা তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাবি ছাত্রলীগের দুই নেতা অভিযোগ করে বলেন, গত ২৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে থেকে এক খাবার দোকানির কাছ থেকে খাবারে খোঁয়া থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমানকে না জানানোর বিনিময়ে ৪ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরায়ার্দী হলে ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেনের কাছ থেকে চাাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে বৃত্তসহ চার জনের বিরুদ্ধে। এছাড়া গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাদাবখ্স হলের গেস্ট রুমে বাসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বৃত্ত। এদিকে, অন্যের হয়ে পরীক্ষা (প্রক্সি) দিতে গিয়ে আটক হওয়ায় রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেনকে বহিষ্কার করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ২০১৭ সালের ২১ জুলাই সন্ধ্যায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও রয়েছে এবং পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিলো। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী হলে এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগও উঠে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়াও ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাবির মাদার বখ্শ হলে ছয় শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেনের নামেও অভিযোগ উঠে সহ-সভাপতি শাদীদ মুনতাসির এলাহী, মেহেদি হাসান সজল, সাংগঠনিক সম্পাদক অর্ক, ছাত্রলীগ কর্মী শুভ্রসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর পাশাপাশি। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলামকে মারধরের ঘটনায় অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মেহেদী হাসান মিশুকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।লাঠি হাতে আক্রমণে ছিলেন রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু। তরিকুলকে মারধরের ধারণকৃত ভিডিওচিত্রে কালো টি-শার্ট পরিহিত অবস্থায় বাঁশ দিয়ে তরিকুলকে পেটাতে দেখা যায় তাকে। এছাড়া এ বছরের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে তুচ্ছ কারণে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী। অভিযোগকারী আরবি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের প্রথম বর্ষের মো. জাকির রেদওয়ান। অভিযোগ শাখা ছাত্রলীগের ৪ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশুও। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থীদের মারধরসহ নানা অভিযোগ উঠে।

তদন্ত কমিটিকে হাস্যকর দাবি করে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাবি শাখার আহবায়ক মাসুফ মোন্নাফ বলেন, তাদের তদন্ত কমিটিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক কারোই কোন আস্তা নাই। ছাত্রলীগ এতো বড় একটি ছাত্রসংগঠন আর এমন একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনার তদন্তে তারা মিশুর মতো সন্ত্রাসীকে কমিটিতে রেখেছে। সবকিছু মিলিয়ে বৃহৎ একটা সংগঠনের জগাকিচুড়ি মার্কা অবস্থা।যদিও এ কমিটি বা তদন্তে শিক্ষার্থীদের কিছু আসে যায় না। যারা অপকর্মের সাথে জড়িত আর অপকর্মের ভিতর দিয়ে নেতা হয়েছেন তাদের দিয়ে আরেকটি অপকর্মের কী তদন্ত হবে?


সর্বশেষ সংবাদ