রক্তাক্ত রাবি শিক্ষার্থী, অধরা ছাত্রলীগের মূল অভিযুক্তরা

অভিযুক্ত আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবীর নাহিদ
অভিযুক্ত আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবীর নাহিদ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ছাত্রলীগের দুই নেতা। শুক্রবার রাতে ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায় ও বাম হাত ভেঙে যায়। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে শনিবার বিকেলে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আটককৃতরা হলেন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আকিমুল ইসলাম রিফাত, হাসানুজ্জামান, একই বিভাগের ২য় বর্ষের সুজন আলী, লোক প্রশাসন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ। তবে ঘটনার অভিযোগের তীর মূলত যাদের দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি তাদের। তারা হচ্ছেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ লাক ও বাংলা বিভাগের হুমায়ুন কবীর নাহিদ। তারা চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী।

এর আগে ঘটনার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিতে শনিবার দুপুরে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। প্রায় চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সোহরাব হোসেন ফাইন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এবং ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

এদিকে ঘটনা তদন্তে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জানিয়েছেন, আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। দোষ প্রমাণ হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সে তদন্ত কমিটিতে আছেন, সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত, মাহফুজ আল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বির, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু।

তবে ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন অনেকেই। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে যাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পত্রিকায় সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন তারাই নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে নেমেছেন। তারা তদন্তের নিরপেক্ষতা বা সুষ্ঠুতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এছাড়া শামসুজ্জোহা হল প্রশাসন থেকেও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে ছাত্রলীগ কর্মী আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবীর নাহিদের নেতৃতে বেশ কয়েজন সোহরাবকে ল্যাপটপ চুরির অভিযোগ তোলে হলের তৃতীয় ব্লকের ২৫৪ নাম্বার কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসা করেন আসিফ লাক ও হুমায়ন কবির নাহিদ। একপর্যায়ে তারা দুইজন মিলে সোহরাবকে রড দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাত করে। সোহরাব রক্তাক্ত হলে তারা মারধর বন্ধ করেন।

পরে সোহরাবের বন্ধুরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সোহরাবের বন্ধু তনয় জানান, সোহরাবের বাম হাতের কনুইয়ের ওপর ও নিচে দুই জায়গায় ভেঙে গেছে। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জানান, মাথার তিন জায়গায় মোট ১৫ টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার পায়েও গুরুতর যখম হয়েছে। এক্সরের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে পা ভেঙ্গেছে কিনা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি থেকে তিনটি দাবি জানিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে নাহিদ ও আসিফসহ যারা হত্যা চেষ্টায় জড়িত ছিল তাদের গ্রেপ্তার ও স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার, হল প্রশাসন নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সোহরাবের চিকিৎসা ব্যয় বহনের দায়িত্ব নেওয়া।

পরে বিকাল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। সেখানে ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, আজ রাতের মধ্যেই দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। সোহরাবের ব্যয়ভার প্রশাসন বহন করবে বলেও জানান এই শিক্ষক।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, শিক্ষার্থী মারধরের ঘটনায় শহীদ শামসুজ্জোহা হল থেকে চার শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ