নূর হোসেন ইয়াবা আসক্ত নয়, মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল, সাক্ষাৎকারে রাঙ্গা

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’ ছিল বলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘নূর হোসেন যখন মারা গেছেন, তখন ইয়াবা বা ফেনসিডিল পাওয়া যেতো না। এই দুটি শব্দ স্লিপ অব টাং হয়ে গেছে। তবে সে সুস্থ প্রকৃতির মানুষ ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল।’ সোমবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বাংলা ট্রিবিউনকে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, রবিবার (১০ নভেম্বর) বনানীতে জাপার চেয়ারম্যান কার্যালয়ে ‘গণতন্ত্র দিবস’-এর এক আলোচনা সভায় রাঙ্গা বলেছিলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন? নূর হোসেনকে? কে নূর হোসেন? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর।’

রবিবারের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে রাঙ্গা বলেন, ‘আমি গতকাল বলেছিলাম, নূর হোসেন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল, ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিল। সেটা আমার স্লিপ অব টাং হয়ে গিয়েছিল। আমি স্বীকার করছি, তখন ফেনসিডিল-ইয়াবা পাওয়া যেতো না। সুতরাং এই দুটি শব্দের জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’


‘আপনি নূর হোসেনের পরিবারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবেন কিনা’—এমন প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, ‘‘নূর হোসেনকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে যারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, তাদের কাছে আমি ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি বলে দিয়েছি। ‘ইয়াবাখোর’, ‘ফেনসিডিলখোর’ শব্দ দুটি স্লিপ অব টাং হয়ে গেছে। এই শব্দগুলো আমি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। নূর হোসেন ইয়াবা, ফেনসিডিল খেতো বলার জন্য আমি তার পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে নিচ্ছি।’’

নূর হোসেনকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্য তার নিজের নাকি দলীয়—জানতে চাইলে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘আমি জাপার মহাসচিব। আমি যা বলি, দলের পক্ষেই বলি। আমার কি ব্যক্তিগত কোনও বিষয় আছে? নূর হোসেনের সঙ্গে তো আমার জমিজমা সংক্রান্ত কোনও ঝামেলা ছিল না।’

এক প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, ‘‘এখনও নূর হোসেনের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট জমা আছে। কারা দোষী, কারা তাকে গুলি করলো? তার পিঠে গুলি লেগেছে। তার পিঠে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। তার বুকে ‘সন্ত্রাস নিপাত যাক’ বা ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লেখা ছিল।’’

নূর হোসেনের বুকেপিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখা প্রসঙ্গে রাঙ্গা বলেন, ‘এসব কথা তো আপনি আপনার বুকে আঁকতে বা লিখতে পারেন না। কেউ না কেউ এটা লিখে দিয়েছে। একজন সুস্থ প্রকৃতির মানুষ এটি কোনও সময় করতে পারেন না। সে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। এটা কেউ না কেউ সাবোটাজ করে করেছে। একটা লাশের দরকার ছিল। সেটা তারা করেছে। একইভাবে আমরা ডাক্তার মিলন হত্যারও প্রতিবাদ করেছি। তাকেও পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। এগুলো হলো রাজনীতির আলোচনা।’

রাঙ্গা বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যতদিন ক্ষমতা ছিলেন, ততদিন নূর হোসেনের পরিবারকে তিনি প্রত্যেক মাসে ৫ হাজার টাকা করে দিতেন। তার বাবা এসে টাকা নিয়ে যেতেন।’

নূর হোসেনের পরিবার রাঙ্গার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানালে জাপা মহসচিব বলেন, ‘এখন তারা মামলা করলে করতে পারে। মামলা তো যে কেউ করতে পারেন। দেশে আইন-কানুন তো আছেই।’

রাঙ্গা বলেন, ‘‘বিএনপি-আওয়ামী লীগ সবাই এই স্লোগান দেয়—‘এরশাদের দুই গালে জুতা মার তালে তালে।’ এখন আমাদের কথা হলো, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তো জাতীয় পার্টির একটা জোট আছে। সেটা ১৯৯৬ সাল থেকে। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৯ সালেও একইভাবে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে ছিলাম। যখন যখন আমরা তাদের সঙ্গে জোটে ছিলাম, তখনই তারা নির্বাচনে জয়লাভ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ’৯০ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের জোট ছিল না, তখন বিএনপি ক্ষমতা এসেছে। এ কারণে যখন নূর হোসেনকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এসব করে, তখন আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।’ জাপার কর্মীরা মেনে নিতে পারেন না বলেও রাঙ্গা মন্তব্য করেন।


সর্বশেষ সংবাদ