বাবরি মসজিদের রায় নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল

অযোধ্যায় ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিতর্কিত জমি দেওয়া হল হিন্দুদের। মসজিদ নির্মাণের জন্য বিকল্প জমি দেওয়ার নির্দেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। 

শনিবার দুপুরে দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘‘ভারতের দু’একটা প্রতিষ্ঠান ছিল গর্ব করার মতো। এরমধ্যে অন্যতম সুপ্রীম কোর্ট । কিন্তু হিন্দুত্ববাদী শাসনামলের চেতনা যে এ আদালতকেও গ্রাস করেছে তার প্রমান হচ্ছে বাবরী মসজিদ সংক্রান্ত রায়।’’

‘‘তবে এ রায় আমাদের যতো কষ্ট দেক না কেন, মনে রাখতে হবে যে এর সাথে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কোনরকম সম্পর্ক নেই। ফলে রায়ের কারণে কেউ যেনো তাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে আমাদের প্রত্যেককে। কেউ অধম হলে আমরা উত্তম হবে না কেন?’’

এর আগে আজ শনিবার বিতর্কিত রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি মামলার রায়ে একমত পাঁচ বিচারপতিই। অযোধ্যা রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এলাহাবাদ হাইকোর্ট সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ও নির্মোহী আখড়ার আর্জি খারিজ করার পরও তাদের মধ্যে জমির অংশ সমানভাবে ভাগ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা অযৌক্তিক। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, গোটা জমিটিকে সামগ্রিকভাবে দেখে বিবেচনা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই সব পক্ষকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার আবেদন করেছেন। এই রায়দানকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই ‘খাকি সমুদ্রে’ পরিণত হয়েছে অযোধ্যা। সম্পূর্ণ উত্তরপ্রদেশ পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ, হনুমান মন্দির, বাস, গাড়ি, শহরের প্রতিটি কোণে কোণে মোতায়েন করা হয়েছে উর্দিধারী পুলিশ এবং র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র‍্যাফ)। এ মামলার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করে অযোধ্যা ও উত্তরপ্রদেশের স্পর্শকাতর অঞ্চলগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে প্রায় ৪ হাজার আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এমনকী শনিবার থেকে সোমবার অবধি রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, অযোদ্ধার বিতর্কিত এই ভূমি মালিকানাকে কেন্দ্র করে ১৯৯২ সালে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দুরা অযোদ্ধায় মন্দির নির্মাণ করতে গেলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়।

হিন্দুরা মনে করেন, তাদের দেবতা রামের জন্মভূমিতে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু মুসলিমরা বলছেন, বাবরি মসজিদের স্থানে রামের জন্মের কোনো আলামত নেই। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানী নয়াদিল্লির পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব রাজ্যের স্কুল-কলেজও শনিবার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের প্রধান ও পি সিং বলেন, এখন পর্যন্ত ৫০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের প্রধান বার্তা হচ্ছে যেকোনো উপায়ে শান্তি রক্ষা করা। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৭০ জনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়ে উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯২ সালে যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়; তখন বিজেপির বর্তমানের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা পৃথকভাবে সেই ধ্বংসযজ্ঞে ভূমিকা রেখেছিলেন।

২০১০ সালে উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে জমি সমান ভাগে করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এর ফলে হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দু’ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ। কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে সব পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন।

২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়ে জানিয়েছিল, অযোধ্যায় বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া ও রামলালা বিরাজমানের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ করতে হবে। এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে ১৪টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। এরপর তিন সদস্যের মধ্যস্থতাকারী প্যানেল তৈরি করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু মধ্যস্থতা ব্যর্থ হওয়ায় গত ৬ অগাস্ট থেকে এ মামলার দৈনিক শুনানি শুরু হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট গঠিত বেঞ্চে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ, বিচারপতি এস আব্দুল নাজির।


সর্বশেষ সংবাদ