এক শিক্ষক দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন পদে

অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান

খন্ডকালীন শিক্ষকতার অনুমোদন নিয়ে গোপনে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিনের দায়িত্ব পালনের অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষক হলেন— হাবিপ্রবির পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস শাখার পরিচালকের পরিচালক ও মাইক্রোবায়োলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান। অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ দুইটি পদে থাকার পরও হাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে বেসরকারি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালনের অভিযোগ এ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত— এ তিন বছর হাবিপ্রবি থেকে লিয়েনে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সস অনুষদের ডিন ও ইনস্টিটিউশনাল কোয়োলিটি অ্যাসিওরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। লিয়েন শেষে ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারিতে হাবিপ্রবিতে ফিরে গিয়ে মাইক্রোবায়োলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন তিনি। এরপরের মাসেই যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস শাখার পরিচালকের পরিচালক পদে। অধ্যাপক মোস্তাফিজার হাবিপ্রবির মাইক্রোবায়োলোজি বিভাগের চেয়ারম্যানে পদে নিয়োগ পান গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই পুনরায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে জড়িত থাকার অনুমতি চেয়ে হাবিপ্রবি রেজিস্ট্রার বরাবরা চিঠি দেন অধ্যাপক মোস্তাফিজার। সেখানে ছুটির দিনগুলোতে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অনুমতি চান। এর প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না— এমন শর্তে শুধুমাত্র ছুটির দিনগুলোতে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়ার অনুমতি দেয় এ অধ্যাপককে। খন্ডকালীন শিক্ষকতার অনুমোদন দেয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই লিয়েনে থাকাকালীন দায়িত্ব পালন করা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সস অনুষদের ডিন পদে এখনও রয়েছেন।

যদিও বর্তমানে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন পদে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক মোস্তাফিজার রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি লিয়েনে থাকাকালীন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সস অনুষদের ডিন পদে ছিলাম। এরপর সেখান থেকে হাজী দানেশে ফিরে আসি। এখন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই শুধুমাত্র ছুটির দিনে। সেখনকার কোনো পদে আমি নেই।’ একইভাবে অধ্যাপক মোস্তাফিজার রহমানের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সস অনুষদের ডিন পদে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অধ্যাপক মোস্তাফিজার রহমানের দায়িত্ব পালনের পর নতুন ডিন নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তবে অনুসন্ধানে মিলে ভিন্ন তথ্য। অধ্যাপক মোস্তাফিজার রহমানের অনুমোদিত লিয়েনের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। পরবর্তীতে হাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র ছুটির দিনগুলোতে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়ার অনুমতি মেলে একই বছরের ১৫ মার্চ। যদিও লিয়েন শেষ হওয়ার পর পুনরায় অনুমোদন পাওয়ার আগেই ১০ মার্চেও সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নথিতে স্বাক্ষর করেন অধ্যাপক মোস্তাফিজার। এছাড়া চলতি বছরের ২৭ আগস্ট ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি গোলটেবিল আলোচনায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। সে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ ও উপস্থিতিপত্রে অধ্যাপক মোস্তাফিজার রহমানের পদবী লেখা রয়েছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সস অনুষদের ডিন হিসাবে। এছাড়া গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সস অনুষদের ডিন হিসাবে অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমানের নাম রয়েছে।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সুর বদলান অধ্যাপক মোস্তাফিজার রহমান। অধ্যাপক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘আসলে বর্তমানে যিনি ডিন রয়েছেন, তিনি বেশ কয়েক মাস ধরে অসুস্থ। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে ফাইলে সাইন করার অনুরোধ করায় আমি কা করেছি। তবে এখন থেকে আর করবো না। ওয়েবসাইটে ডিন পদে নাম থাকা প্রসঙ্গে বলেন, ওয়েবসাইটে হয় তো আপডেট করা হয়নি। তবে লিয়েন শেষ হওয়ার পর পুনরায় অনুমোদন পাওয়ার আগেই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নথিতে স্বাক্ষর করার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো জবাব দেননি অধ্যাপক মোস্তাফিজার।

হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মো. ফজলুল হক বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে মাত্র ছয় মাস হলো। আগের রেজিস্ট্রার ছুটির দিনে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাওয়ার অনুমতি দেয়। আমি জানি যে, তিনি শুধুমাত্র ছুটির দিনে সেখানে যান। তবে সেখানে ডিনের দায়িত্ব পালন করেন সেটি জানি না। অনুমোদন প্রক্রিয়া অনুযায়ী, উনার সেখানে ডিনের দায়িত্ব পালনের কোনো সুযোগ নেই।’


সর্বশেষ সংবাদ