কোন সাবজেক্টে ভর্তি হবেন?

প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময় দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কিছু গ্রুপ বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ভর্তি পরিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য এসব গ্রুপে পোস্ট দেয় কিংবা কমেন্ট করে। কোনো একটি বিষয় বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, একটা ছবি তুলে পোস্ট দিলেই কয়েক মিনিটের মধ্যে সমাধান এসে হাজির। ঠাকুরগাঁও থেকে পরীক্ষা দিতে প্রথম চট্টগ্রামে যাবেন একজন পরীক্ষার্থী—বাস থেকে কোথায় নামতে হবে, কোথায় ভালো আবাসিক হোটেল পাওয়া যাবে, কোন হোটেল থেকে তার পরীক্ষার কেন্দ্র কাছে হবে ইত্যাদি প্রায় সব তথ্যই তার অজানা। তিনি এসবকিছু জানতে চেয়ে একটা পোস্ট দিতেই সঙ্গে সঙ্গেই চট্টগ্রামের বিস্তারিত এসে উপস্থিত তার পোস্টের কমেন্ট বক্সে। ফেসবুক সত্যিই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজকে করে দিয়েছে সহজ। তবে এর অসংখ্য উপকারী দিকের পাশাপাশি রয়েছে ক্ষতিকর কিছু দিক, যেখানে প্রয়োজন আমাদের একটুখানি সতর্কতা।

একটু আগেই ফেসবুকের যে গ্রুপগুলোর কথা বললাম, সেই গ্রুপগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার পর অনেক পরীক্ষার্থীই পরামর্শ চেয়ে পোস্ট দেয়, ‘ভাইয়া, কোন সাবজেক্টটা ভালো?’, ‘কোন সাবজেক্টে পড়লে আমি ভালো চাকরি পাব?’, ‘কোন সাবজেক্ট পড়লে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ বেশি?’ ইত্যাদি। ফেসবুকের অতি পরিচিত এই দৃশ্যই বলে দেয়, আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কতটা ফেসবুক নির্ভর হয়ে পড়ছে! বেশ কয়েকদিন থেকে এসব গ্রুপ ঘেঁটে যে জিনিসটি লক্ষ করলাম, তা হলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া পরীক্ষার্থীরা সাবজেক্ট নিয়ে অতিমাত্রায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। কোন সাবজেক্টে পড়লে তাদের ভবিষ্যত্ ভালো হবে, চাকরির বাজারে চাহিদা থাকবে—এ নিয়ে তারা বেশ উদ্বিগ্ন। তাই বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে দৌড়াচ্ছে সাবজেক্ট রিভিউয়ের জন্য। এসব সাবজেক্ট রিভিউ তাদের খুব একটা উপকারে আসছে বলে মনে হয় না। বরং তাদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব্ব বেড়ে যাচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।

আমাদের চারপাশে তাকালে এমন অসংখ্য শিক্ষার্থী দেখতে পাওয়া যায়, যারা কোনো সাবজেক্টের চাকরির বাজার দেখেই সেই সাবজেক্ট নিয়ে শুরু করেছিল তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। কিন্তু এরপর একসময় তাদের মধ্যে জন্ম নেয় পড়াশোনার প্রতি অনীহা। বাড়তে থাকে হতাশা। কিন্তু কেন?

সেই যে ছোটবেলায় পরীক্ষার ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য পড়াশোনা করার মানসিকতা তৈরি হয়, বড় হয়ে তা রূপ নেয় ভালো একটি চাকরি পাওয়ার প্রবণতায়। তাই কোনো একটি সাবজেক্টের পড়াশোনার ক্ষেত্র সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনেই শুধু চাকরির বাজারের চাহিদা দেখে বেছে নেওয়া হয় সেই সাবজেক্ট। একবারও কেউ ভেবে দেখে না সেই সাবজেক্টে কী কী পড়ানো হয়, সেসব বিষয়ে তার আগ্রহ ও দক্ষতাই বা কতটুকু? এসব বিষয় চিন্তাভাবনা না করেই যখন কেউ কোনো সাবজেক্ট বেছে নিচ্ছে, তখন একটা পর্যায়ে এসে তাকে সম্মুখীন হতে হচ্ছে হতাশার।

উদাহরণ হিসেবে পুরকৌশল বিভাগের কথা বলা যেতে পারে। প্রকৌশলবিদ্যার অত্যন্ত প্রাচীন ও জনপ্রিয় এই শাখাটির চাকরির ক্ষেত্র দেশে ও বিদেশে সমানভাবে বিস্তৃত। এখন কেউ যদি শুধু এই বিষয়টুকু দেখেই পুরকৌশল বিভাগ বেছে নেয়, তাহলে তা কতটা যুক্তিসংগত হবে? বরং তা বেছে নেওয়ার আগে একজনকে জানতে হবে—তার মাঝে কল্পনাশক্তির বিস্তার কতটুকু, সে বলবিদ্যায় কতটা আগ্রহী, ড্রইং ও ডিজাইনিং কি তার ভালো লাগার ক্ষেত্র। এই বিষয়গুলো ব্যাটে-বলে মিললে তবেই একজন বেছে নিতে পারে পুরকৌশল বিভাগকে।

তাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বলছি, কোনো একটি সাবজেক্টের চাকরির বাজার না দেখে সেই সাবজেক্টের পড়াশোনার ক্ষেত্রসমূহ জেনে ও তার সঙ্গে নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা যাচাই করে তবেই একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন। কারণ, চাকরির পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে চারটা বছর কিংবা তারও বেশি সময় তোমাদের কাটাতে হবে এই পড়াশোনাগুলো নিয়েই। এদের প্রতি ভালো লাগা না জন্মালে কিংবা ভালো করে না পড়লে সাবজেক্টের চাকরির বাজার যতই বিস্তৃত থাকুক না কেন, চাকরি পরিণত হবে আকাশ কুসুম কল্পনায়। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিবেচনায় নিতে হবে নিজের জ্ঞান, ভালো লাগা ও দক্ষতা; চাকরির বাজার নয়।

মডেল :জারা, ছবি :রহমান লিমু


সর্বশেষ সংবাদ