বেরোবি ছাত্রলীগের টর্চার কমান্ডার জয়, হলে মাদকের রমরমা ব্যবসা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টর্চার সেলের কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল ইসলাম জয়। হলে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী উঠানো, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে চাঁদা দাবি, হলে মাদকের রমরমা ব্যবসা ও আবাসিক হলের কক্ষে বহিরাগতদের নিয়ে মাদক সেবনের অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও দিনের পর দিন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে প্রশাসন। এমনকি একটি ঘটনার পর জয় তার অপরাধ স্বীকার করলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। 

জানা যায়, হল প্রশাসন কর্তৃক সিট বরাদ্দ পেলেও শিক্ষার্থীরা জয়কে চাঁদা না দিয়ে হলে উঠতে পারে না। হলে উঠতে হলে তার অনুমতি নিতে হয়। নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় জয়কে। সর্বশেষ গত ২৭  সেপ্টেম্বর রায়হানুল কবির নামের এক শিক্ষার্থীর কাছে চাঁদা দাবি করে জয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আবুল কালাম আজাদসহ ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করে জয়। একইসঙ্গে ২দিনের মধ্যে টাকা না দিলে তাকে হল ছাড়ার হুমকিও দিলে তাজহাট থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন ওই শিক্ষার্থী। একই দিন আরও একজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন জয়। পুনরায় মারধরের ভয়ে কারো কাছে অভিযোগ করেনি ভূক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। এছাড়া, ১৯  সেপ্টেম্বর চাঁদা দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ করে দেন তিনি।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আবাসিক হলে বৈধ সিটে উঠতে চাওয়ায় আল আমিন ও সৌম্য সরকার নামে দু্ই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন ছাত্রলীগের এই নেতা। পরে  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ এবং থানায় মামলা করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। ওই দুই ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। আল আমীন দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি ও বেরোবি সাংবাদিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ এবং সৌম্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি ও বেরোবি সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক।

লিখিত অভিযোগে তারা বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শহীদ মুখতার ইলাহী হলের একটি কক্ষে দু'টি সিট বৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সিটে উঠতে গেলে প্রথমে সৌম্য সরকারকে মারধর শুরু করেন ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান জয়। পরে তাকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় আল আমীন এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর শুরু করেন জয়ের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন। তিনি চিৎকার করলে জয়ের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল তার গলা চেপে ধরেন এবং চিৎকার করতে নিষেধ করেন। পরে কয়েকজন এসে তাদের দু'জনকে উদ্ধার করেন।

চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল শহীদ মুখতার ইলাহী হলের ডাইনিং বয় জাকির হোসেনের কাছে চাঁদা না পেয়ে অমানুষিকভাবে মারধর করেছে হলে অবৈধভাবে অবস্থান করা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামী মাহমুদুল ইসলাম জয়। এদিকে মারধরের পর চাঁদা না পাওয়ার জেরে হলের ডাইনিং কক্ষে তালা দিয়েছে জয়। এ ঘটনায় কর্মচারীরা নির্দিষ্টকালের জন্য ডাইনিং বন্ধের ঘোষণা দিলে ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও জয়ের কক্ষে নতুন শিক্ষার্থীদের আচরণ শেখানোর নাম করে চাঁদা দাবি, চাঁদা না দিলে মাদক দিয়ে ফাঁসানো এবং উলঙ্গ করে মারধরের অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদ মুখতার  ইলাহী হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মী জানান, মানুষের যেমন তিনবেলা ভাত না খেলে চলতে পারে না তেমনি জয় তিন বেলা হলের শিক্ষার্থীদের মারধর না করলে থাকতে পারে না।তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়ার ডান হাত মাহমুদুল ইসলাম জয়। সভাপতির প্রত্যক্ষ সমর্থনে জয় প্রতিনিয়ত অপকর্ম করছেন। তাঁরা আরও বলেন, হল প্রশাসন জয়ের ব্যাপারে সবই জানেন কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেন না।

হল প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে মাদকের রমরমা ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে সিটদখল করে বৈধ শিক্ষার্থীদের উঠতে না দেওয়া, প্রতিনিয়ত হল কর্মচারী, ডাইনিং কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের মারধর করেন জয়। তার এমন কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অতিদ্রুত তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়ার অনুরোধ করেন শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

বোরোবি ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল ইসলাম জয়ের বিরুদ্ধে উঠা উপরের অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তিনি নিজেকেও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়াও তিনি বলেন, আপনারা লিখে দেন- আমাকে ফোনে পাওয়া যায়নি অথবা মোবাইল বন্ধ রয়েছে।  

এবিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়ার মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেরোবির শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট শাহীনুর রহমান বলেন, আমি সদ্য ওই হলের দায়িত্ব পেয়েছি। এসব বিষয়ে খুব বেশি অবগত নই। এধরনের অভিযোগ আসলে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 


সর্বশেষ সংবাদ