ভিডিও নিয়ে লুকোচুরি বুয়েট প্রশাসনের, উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শের-ই বাংলা হল প্রশাসন সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে লুকোচুরি করছেন। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িদের ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা যাবে বলে জোর দাবি তুলছে শিক্ষার্থীরা।

কিন্তু ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করতে প্রশাসনের অনীহা দেখা গেছে। তারা বলছে, পুলিশ ভিডিও ফুটেজ নিয়ে গেছে। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও দিতে রাজিও হলেও শিক্ষার্থীরা পুরো ভিডিও দাবিতে তা প্রত্যাখ্যান করে।

আজ সোমবার সকাল থেকে হলের প্রভোস্টের কক্ষের সামনে অবস্থান ‍নিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, হল প্রশাসন হত্যাকারীদের আড়াল করতে সিসিটিভির ফুটেজ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতে চাইছে। 

প্রসঙ্গত, রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আবারের লাশ যে স্থানে ফেলে রাখা হয়, ঠিক তার উপরে হলের সিসিটিভি রয়েছে। এবং ওই সিসিটিভি সচলও ছিল। ফলে আবরারের দেহ কারা সেখানে রেখে যায় বা সেসময় হল থেকে কারা বের হয়- তার সবটুকু সিসিটিভিতে ধারণ থাকার কথা।

এদিকে, সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশ করতে শিক্ষার্থীদের দাবি উঠলেও হল প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, সিসিটিভির সব ফুটেজ পুলিশ নিয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সন্ধ্যায় কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজ হল প্রশাসন দিতে রাজি হয়েছিল বলে জানায় অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা। ওই কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজে হত্যাকারীদের ভিডিও নেই। শুধু সিডিতে ফেলে যাওয়া আবরারকে নিরাপত্তাকর্মী উদ্ধারের মুহূর্তগুলো দেখা যাচ্ছে। তাই এই ভিডিও ফুটেজ নিতে অস্বীকার করে শিক্ষার্থীরা।

হলের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত পুরো ভিডিও প্রকাশের দাবি তুললে হল প্রশাসন জানায়, পুরো ভিডিও পুলিশ নিয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে নিয়ে আসতে বলা হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি তুলে- পুলিশের কাছ থেকে নয়, হল প্রশাসনকে দিতে হবে ভিডিও ফুটেজ। দরকার হলে পুলিশ ওই ফুটেজ হলে নিয়ে আসুক।

রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, গতকাল দিবাগত রাতে বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। পরে দিবাগত রাত তিনটার দিকে হল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

মারা যাওয়া আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।

হলের যে কক্ষে আবরারকে পেটানো হয়, সেই কক্ষে চার শিক্ষার্থী থাকেন। তাঁদের মধ্যে যে তিনজন পলাতক, তাঁরা হলেন-বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ। আরেকজন চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী, যিনি দুর্গাপূজার ছুটিতে দুই দিন আগে গ্রামের বাড়িতে গেছেন ৷


সর্বশেষ সংবাদ