একাডেমিক সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ১১ শিক্ষার্থীর পরীক্ষাগ্রহণ

  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১১ শিক্ষার্থীকে অ্যাকাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত না মেনে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের বিরুদ্ধে। তবে পরীক্ষা দিলেও ফরম ফিলআপ করেনি তাদের কেউ।

একাডেমিক কমিটির বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ক্লাসে উপস্থিতির হার ৩০ শতাংশের ও কম থাকায় ১১ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি বিভাগটির অ্যাকাডেমিক কমিটি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সুপারিশে ১১ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি তিন হাজার টাকা জরিমানা নিয়ে বিভাগটিকে পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।

৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আমীর মোহাম্মদ মুছা স্বাক্ষরিত নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির নিকট প্রেরিত একটি পত্রে উল্লেখ রয়েছে, ‘আপনার বিভাগের ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ সেশনের ১১ জন শিক্ষার্থীর আবেদনে বিভাগীয় সভাপতির প্রেরিত বিষয়টি প্রক্টরের সুপারিশের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় জনপ্রতি তিন হাজার টাকা জরিমানার পে-অর্ডার অত্র দপ্তরে জমা প্রদান করায় এমএসএস পরীক্ষা ২০১৮-এ অংশগ্রহণের জন্য আদেশক্রমে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ফর্ম ফিলআপসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।’

তবে অনুমতি প্রদানের ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরকে বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) একটি চিঠি দিয়েছেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খাদিজা মিতু। এতে বলা হয়, আপনার স্বাক্ষরিত (মেমো নং ৬৭৪৯) পত্র অনুযায়ী বিভাগের ১১ জন মাস্টার্সের শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি প্রদান করেছেন। এই পত্রের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিধি মোতাবেক এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে তা লিখিতভাবে জানানোর অনুরোধ করছি।

বিভাগ সূত্র জানায়, বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় মাস্টার্সের নিয়মিত পরীক্ষায় কোন শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিতির হার (অ্যাটেন্ডেন্স) ৩০ শতাংশের কম হলে তাকে পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হবে না। শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় পুনরায় বিষয়টি উঠলেও উপস্থিতির হার একদমই কম থাকায় অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ওই ১১ শিক্ষার্থী বিভাগের সভাপতির মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে আবেদন জানালে বৃহস্পতিবার সকালে বিভাগকে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয় দপ্তরটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সুপারিশের ভিত্তিতে অনুমতি দেয়া হলেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে তিন হাজার টাকার পে-অর্ডার করতে বলা হয় ওই ১১ শিক্ষার্থীকে। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া মাস্টার্সের পরীক্ষায় ওই ১১ শিক্ষার্থী অংশ নিলেও তাদের কেউই ফরম ফিলআপ করেনি কেউই।

ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি প্রদানের বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক ড.খাদিজা মিতু বলেন, আমি অভ্যন্তরিন ভাবে একটি পত্র জমা দিয়েছি। তবে এর জবাব আমি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরে জানতে চাইবো। এখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. এনএম সাজ্জাদুল হক বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের চিঠি পেয়ে পরীক্ষা কমিটিকে পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে। অতীতেও এরকম অনেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এমনকি শূণ্য শতাংশ উপস্থিতির হার নিয়েও পরীক্ষা দেওয়ার নজির রয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আমীর মোহাম্মদ মুছা বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। শিক্ষার্থীদের আবেদনটি উপাচার্যের নিকট উপস্থাপন করা হলে তিনি প্রক্টরকে এ বিষয়ে মতামত ও সিদ্ধান্ত দিতে বলেন। কয়েক শতাংশ উপস্থিতির হারের (অ্যাটেন্ডেন্স) জন্য শিক্ষার্থীরা একটি প্রোগ্রাম থেকে বাদ হয়ে যাবেন, তা হয় না। তাই উপাচার্য বিষয়টি বিবেচনা করেছেন। তিনি চাইলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, এখানে প্রক্টর বা আমার একক কোনো সুপারিশ না। প্রশাসনিক নিয়মানুযায়ী শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা সুপারিশ করি। পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অনুমতি প্রদান করেন।