খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

সায়ন্তনদের বিদায় বেলা

  © টিডিসি ফটো

১০৫ একরের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। বারো মাসে তেরো পার্বনের মত সারা বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে এই ক্যাম্পাসে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দের বন্যা বয়ে দেয় শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান।

“সহস্র প্রাণের প্রত্যয়ে,স্মৃতির উল্লাসে ” স্লোগানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ ব্যাচ(সায়ন্তদের) ৩দিন ব্যাপী শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান র্যাগ ডে-১৯ সম্পন্ন হয়েছে। ক্যাম্পাসে প্রথম দিন ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি ব্যাচ। সেই নানা রঙে সাড়ম্বর এর সাথে তৈরি হওয়া ব্যাচ, হাজারো গল্প-স্মৃতি সংকলন এর মাধ্যমে কবে যেনো একটা নতুন অস্তিত্ব হয়ে যায়! আর জমানো সব গল্পকে স্মৃতিপট এ ধারণ করে বেলা শেষে তারা বিদায়ের প্রস্তুতি নেয়। তাই বেলাশেষের এই তিনদিন ব্যাপী সমাপনী অনুষ্ঠানের তিনটা দিন হল সাড়ম্বর, সংকলন এবং স্মৃতিপট।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টায় ক্যাম্পাসের হাদী চত্বরে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা সমাপনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। উদ্বোধনের পর ক্যাম্পাস থেকে একটি র‌্যালি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বাস ও ট্রাকযোগে ময়লাপোতা মোড় হয়ে, রয়েল মোড়, শিববাড়ি মোড়, নতুন রাস্তার মোড়, বয়রা বাসস্ট্যান্ড, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, জয়বাংলা মোড় এবং জিরো পয়েন্ট হয়ে বেলা সোয়া ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছায়। এরপর প্রতিটা বিভাগের শিক্ষার্থীরা কালার ফেস্টে মেতে ওঠে। সবাই রং মাখাতে ব্যস্ত থাকে। কেউ বা সিনিয়র ভাইকে কাদায় নাকানি চুবানি দিতে ব্যস্ত। সুন্দর এই মূহুর্তগুলো ক্যামেরা বন্দি রাখতে কেউ ভূল করেনি।

দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনে সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় আলোচনা অনুষ্ঠান ও স্লাইডশো। শিক্ষার্থীদের এই বিদায়ী আলোচনা অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয় ‘সায়ন্তন’। উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে সহশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার এবং সামাজিক সেবা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করেছে। এজন্য তিনি এই ব্যাচের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উপাচার্যকে স্মারক ক্রেস্ট উপহার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে ১৬ ব্যাচেরর প্রত্যেক ডিসিপ্লিনের প্রতিনিধিদের হাতে স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেন উপাচার্য।

তৃতীয় দিন অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সমাপনীর অনুষ্ঠান সন্ধ্যা থেকে মুক্তমঞ্চে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পাস মাতাতে চলে আসে বাংলাদেশের বর্তমান জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলার মধ্যে হাসানের আর্ক ব্যান্ড, ওরফেজ এবং অর্নব। সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে স্টেজে উঠে প্রথমে দর্শকে মাতিয়ে তোলে হাসনের আর্ক ব্যান্ড। এরপর স্টেজে ওঠেন অর্নব। সবশেষে ওরফেজ দর্শকদের মাতিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি টানে। মূহুর্তে আতশ বাজিতে পুরো খুবির ক্যাম্পাস আলোয় পূর্ণ হয়ে যায়।

অনুষ্ঠান শেষে বিদায়ী ১৬ ব্যাচ সায়ন্তনেরা একে অপরের কোলাকুলি, ফটোসেশন ও বিদায় বেলার কান্নায় ভেঙে পড়ে। দেখতে দেখতে চারটি বছর কেটে গেল। এই সব স্মৃতি স্মরণ করে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে।

সায়ন্তনদের বেলার মতই, রঙে রঙিন হয়ে সাড়ম্বর এ শুরু করে, বিধিবৎ ও সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠানিকতা এর মধ্য দিয়ে স্মৃতি ‘সংকলন‘ করে, সঙ্গীতে মেতে উঠে তা ‘স্মৃতিপট‘ এ ধারণ করে শেষ হয় এই শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান।


সর্বশেষ সংবাদ