চবিতে বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্রের ‘মার্চ ফর ক্লাইমেট’

  © টিডিসি ফটো

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবেলায় নিরাপদ ভবিষ্যৎ ও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ। রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা কর্তৃক আয়োজিত ‘মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট, জাস্টিস বেটার ফর ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধনটি।

এদিন সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে মঞ্চ নাটকসহ সচেতনমূলক বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করেন তারা। সমূদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী দিবস দেবের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্বে করেন সহকারী অধ্যাপক এনামুল হক নীল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

সামছুন্নাহার হলের প্রভোস্ট লায়লা খালেদা আখি তার বক্তব্যে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য আমরাই দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমাদের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে বন্যা বাড়ছে। তবে বিকল্প হিসেবে মৌসুম নির্ভর ফসলগুলো আমরা গ্রিন হাউজের মাধ্যমে উৎপাদন করতে পারি। এক গবেষণায় উঠে এসেছে ২১শ সন নাগাত ফসল উৎপাদনের হার ৩০ শতাংশই কমতে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি গ্রিন হাউজ প্রকল্পের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় কোটি টাকা বাজেট পেয়েছে। এটা আমাদের গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। তবে সর্বপরী জলবায়ু পরিবর্তনের দিকেও আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিরীন আখতার বলেন, ‘আজকের এই আন্দোলনে সকলের সম্পৃক্ততা আমাদের উজ্জীবিত করে।’ সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ময়লা ফেলার কোনো নিয়মকানুন না থাকাতে খালবিল নদীনালা সবকিছু ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে শঙ্কা তৈরী হয়েছে সেটা সবার টনক নেড়েছে। তাই খাল ভরাট, বৃক্ষ নিধন, যত্রতত্র পাহাড় কাটা এসব আর করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভুমিকম্প প্রবণ এলাকাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সুইডেনের স্কুলছাত্রী গ্রেটা থুনবার্গের (১৬) ছোট্ট মেয়েটির ধারনায অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে একাত্মতা পোষণ করে রাজপথে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। তাই আমাদেরকেও সকলকে নিয়ে পরিচ্ছন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হবে।’

প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরাও অংশগ্রহণ করেছি। সুইজারল্যান্ডের বরফের পাহাড়গুলো গলে যাচ্ছে। আমরা যদি সবাইকে সচেতন না করতে পারি তাহলে আমরা তলিয়ে যাবো অল্প দিনের মধ্যে। পলিথিন আমাদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।’

সমূদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো মোসলেন উদ্দিন মুন্না বলেন, ‘পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তারা আমাদেরকে উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছে ঠিক কিন্তু আমাদের দুঃসময়ে কেউই পাশে দাঁড়াচ্ছে না।’

প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৫টি দিক হলো- মরুকরণ, ঝড়, বন্যা, সমুদ্রে পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও কৃষিক্ষেত্রে অধিকতর অনিশ্চয়তা। যার তিনটিতে বাংলাদেশ রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়।

উষ্ণায়নের বর্তমান ধারা ২০৫০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে সমুদ্রের পৃষ্ঠের উচ্চতা তিন ফুট বেড়ে যেতে পারে এবং প্লাবিত হতে পারে ১৭ শতাংশ ভুমি।


সর্বশেষ সংবাদ