হামলার পরও মাঠ ছাড়েনি শিক্ষার্থীরা, চলছে অনশন (ভিডিও)

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আবারও উপর হামলা চালানো হলে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। হামলা ও বাধা উপেক্ষা করেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশন-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামীকাল রোববার থেকে ১১ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নুরউদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই আদেশে আজ সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাদের অনশন কর্মসূচি পালন করছে। এর আগে শিক্ষার্থীদের বেলা ১১টা পর্যন্ত হল থেকে বের হতে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলনে যোগ দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের একটাই দাবি—ভিসির অপসারণ। টানা চার দিন আন্দোলন এবং তিন দিনের আমরণ অনশন কর্মসূচি চলছে তাদের। আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে যুক্ত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক সমাজ ১৬টি দাবি সংবলিত পত্র দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে তাদের ওপর অন্তত পাঁচ বার হামলা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, ভিসির ভাড়া করা স্থানীয় গুন্ডাবাহিনীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে লাঠি, রামদা এবং ইট নিয়ে হামলা করেন। আহত বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যাদের মধ্যে অন্তত চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘আজকে উপাচার্যের নির্দেশে আমাদের ভাইয়েদের ওপরে হামলা হয়েছে, তারা তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়েছে। একজন উপাচার্য কতটা নিচু মন মানসিকতার হলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে পারে? আমরা অবিলম্বে এই উপাচার্যের পদত্যাগ চাই’।

তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর কে বা কারা হামলা করেছে, তা আমার জানা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ফেসবুকে লেখার জেরে ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপাচার্যের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। উপাচার্য বহিষ্কারাদেশ তুলে নেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে জোর আন্দোলন গড়ে তোলেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৪টি সিদ্ধান্ত নিয়ে তা রেজিস্ট্রার মো. নুরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি আদেশে প্রকাশ করে। ওই আদেশের ৪ নম্বরে বলা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাক্‌স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার করা হবে না। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান করা হবে না। যে ফেসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে এত কিছু, সে বিষয়ে আদেশের ১২ নম্বরে বলা হয়, ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে না।


সর্বশেষ সংবাদ