রুমকির শিক্ষক হবার স্বপ্ন পূরণ হবে তো?

রুমকি ও তার মা
রুমকি ও তার মা  © সংগৃহীত

জন্মের পর থেকেই চলাফেরার শক্তি ছিল না রাজিয়া সুলতানা রুমকির। জন্ম থেকেই দুটি-পা অকেজো। হাঁটতে পারেন না। তাতে কি, জীবন তো আর থেমে থাকে না। তাই জীবনের চাকা ঘোরাতেই শারীরিক প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে রেখেছেন মেধার স্বাক্ষর। অদম্য শক্তি, মায়ের ভরসা আর শিক্ষক, বন্ধুদের সহযোগিতা সম্বল করে স্বপ্ন দেখেছেন শিক্ষক হওয়ার। সেই ইচ্ছে ডানায় ভর করেই সমস্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দূরে সরিয়ে ভর্তি হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৮-১৯ সেশনে আরবি বিভাগের প্রথম বর্ষে। কিন্তু এত প্রতিকূলতা পেরিয়েও তার সেই স্বপ্নে হাতাশার ছাপ।

সামনের বাঁধা ডিঙাবে কী করে? দিনমান এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার মনে। তার স্বপ্ন পূরণে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিবন্ধিতা। এ নিয়ে চিন্তিত তার মা-বাবাও।

রাজিয়ার মা নাজনীন বেগম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ শহীদুল্লাহ কলা ভবনের তৃতীয় তলায়। আমার মেয়ের জন্য প্রতিদিন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে ক্লাস করা দুষ্কর। আমার কষ্টটা কষ্টই রয়ে গেল। ছোট থেকেই অনেক কষ্ট করে তাকে পড়াশোনা করিয়েছি। এখন এত বড় জায়গায় পড়ার সুযোগ পেয়েও সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠার জন্য তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। রাজিয়ার স্বপ্নটা কী আর পূরণ হবে না?

সমস্ত প্রতিবন্ধিকতাকে জয় করে রাজিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও তার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যেতে বসেছে। এমন দূর্ভোগে রাজিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা যেন থেমে যেতে বসেছে।

রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমার স্বপ্ন শিক্ষক হওয়ার। পড়াশোনা শেষ করে আমি আমার মত দুর্ভাগাদের নিয়ে কাজ করতে চাই, যারা এমন সীমাহীন কষ্ট করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তিন তলায় উঠে ক্লাস করা আমার জন্য সম্ভব হবে না। আমার স্বপ্নটা বোধ হয় আর পূরণ হবে না। নিচ তলায় ক্লাস হয় এমন বিভাগে স্থানান্তর করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুই ভাইবোনের মধ্যে রাজিয়া বড়। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। কোমর থেকেই তার পা অকেজো। হুইল চেয়ারে বসেই জীবন যাপন করতে হয় তাকে। এভাবেই ২০১৫ সালে মাধ্যমিকে বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪.৩৯ এবং ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে সরকারী মহিলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে ৪.০৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পিকআপ ভ্যান চালক বাবা আর গৃহিণী মায়ের অকুণ্ঠ সমর্থন আর শত সংগ্রাম শেষে ২০১৮-১৯ সেশনে রাবির আরবি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন রাজিয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরবি বিভাগের সভাপতি বলেন, আমাদের বিভাগে নিয়মিত ক্লাস না করলে টিকে থাকাও মুশকিল হয়ে যাবে। তিন তলায় এসে ক্লাস করাটাও তার জন্য কষ্টকর। এখন যদি উপাচার্য তাকে নিচতলায় যেসব বিভাগের ক্লাস হয়, সেগুলোতে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করেন তাহলেও সমস্যাটা সমাধান হতে পারে।

রাজিয়া সুলতানার এই দূর্ভোগের কথা শুনে এগিয়ে এসেছেন রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান এহসান। রাজিয়ার সমস্যাটি সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় এ ব্যাপারে মাহফুজুর রহমান এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এসময় উপ-উপাচার্য বলেন, রাজিয়ার জন্য ক্লাসগুলো নিচে করার ব্যবস্থা করাটা সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগগুলো দীর্ঘদিন থেকে এভাবেই আছে। তার অনুষদের বাহিরে অন্য অনুষদের বিভাগে ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়। তবুও আমরা দেখছি ওর জন্য কী করা যায়।

মাহফুজুর রহমান এহসান বলেন, মেয়েটি অনেক সংগ্রাম করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এখন তিন তলায় ক্লাস হওয়ার কারণে তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নটা যেন থেমে যাচ্ছে। এমন সীমাহীন কষ্ট করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া রাজিয়ার স্বপ্ন বস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন তার সমস্যার দিকটি বিবেচনা করা।


সর্বশেষ সংবাদ