ভিসির পদত্যাগ দাবিতে রাতেও উত্তাল বশেমুরবিপ্রবি

রাতেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে মুখরিত পুরো ক্যাম্পাস। প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ধুমায়িত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তারা উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া আমরণ অনশন ভাঙবে না বলে জানিয়েছে।

রাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে প্রশাসনিক ভবনের তালা দেয়া হয়েছে। এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা উপাাচর্য বিরোধী স্লোগান দিয়ে অবস্থান করছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাচ্ছে না তারা। তবে গতকাল রাতে ১৪টি বিষয়ের নিশ্চয়তা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করেছে শিক্ষার্থীরা। রাত ৯টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষর করতে শুরু করে এবং এক ঘন্টার মধ্যেই শত শত শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করে।

অনশনে অংশগ্রহণরত এক শিক্ষার্থী জানান, জাতির পিতার জন্মভূমিতে তার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কোনো দুর্নীতিবাজকে উপাচার্য হিসেবে দেখতে চাই না। নিয়োগ দুর্নীতি, ভর্তি দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারিসহ মোট ২০টি কারণে আমরা তার পদত্যাগ চাই। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানান অনশনরত শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সমর্থিত কিছু শিক্ষার্থী দ্বারা অনশনকারীদের আন্দোলন বন্ধ করাসহ বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। 

শিক্ষার্থীরা জানান, যাতে করে আন্দোলনকারীরা বাড়ি চলে যায় তার জন্য গোপালগঞ্জের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বাস সার্ভিস আজ ফ্রি ঘোষণা করা হয়েছে। এসময় শিক্ষকরা আন্দোলনকারীদের বাড়ি চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভুঁইয়ার মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তা বন্ধ দেখায়।

সম্প্রতি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী’ এই বাক্যটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ, অমানবিক, স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক ও সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খন্দকার নাছির উদ্দীনের বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্চাচারিতার জন্য তার পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন পক্ষ।

এর আগেও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার দায়ে ৫ শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাতে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভের এক পর্যায়ে গভীর রাতে একটি অফিস আদেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার নুরুদ্দীন আহমেদ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ১৪টি বিষয়ের নিশ্চয়তা দেয়া হয়।

এর মধ্যে অন্যতম হলো- সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার করা হবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান করা যাবে না। ফেসবুক স্ট্যাটাস ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে না।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেই আশ্বাসকে প্রত্যাখান করে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে ফের বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এমনকি তাদের বিক্ষোভের মুখে নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছে প্রশাসন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার নুরুদ্দিন আহমেদ বলেন, অনিবার্য কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।