জাবির আগুনে ঘি ঢালল ভিসিপন্থী প্যানেল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একনেক কর্তৃক অনুমোদিত অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে একের পর এক দীর্ঘসূত্রিতা দিবালোকের মত প্রকাশ পাচ্ছে। প্রকল্পে টেন্ডার ছিনতাই, পরিবেশ ধ্বংস, অবৈধ ভাবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' এর ব্যানারে আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনকারীদের সাথে প্রশাসনের একটি ফলপ্রসূ বৈঠকে প্রশাসন দুটি দাবি মেনে নেয়।

কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য প্রশাসন তিন কার্যদিবস সময় চাই আইনজ্ঞদের পরামর্শের জন্য। প্রশাসনের এই তিন কার্যদিবসের মধ্যেই ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে রক্তপাতহীন বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়। যার প্রধান নিয়ামক হিসেবে জাবি উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির ঘটনা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এবার কাহিনীর পটপরিবর্তন,'নের্তৃত্বের পরিবর্তন হলেও আনুগত্যের পরিবর্তন হয়নি' টাইপের সাংঘাতিক কিছু ঘটে যায়। ফলস্বরুপ ফোনালাপ ফাস। ফাসকৃত ফোনালাপ আন্দোলনকারীদের যৌক্তিকতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।

এরপর পূর্বনির্ধারিত আলোচনার আগের রাতে উপ-উপাচার্য সহ ৯জন শিক্ষক শিক্ষার্থীর মুঠোফোন অজানা কারণে নিশ্চল হয়ে যায়। উপ-উপাচার্য আলোচনা বর্জন করেন। অনুমিতভাবেই বৈঠকের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলে আন্দোলনকারীরা। উপাচার্য গণমাধ্যমে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে। এবার সুদীর্ঘ এ উন্নয়ন প্রহসন আরো একটি ধাপে প্রবেশ করেছে একটি আলাদা প্রেক্ষাপটকে ধারন করে।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেনের পদত্যাগ দাবিসহ তিনটি দাবি করা হয়। তাদের অন্য দাবি গুলো হচ্ছে- অধ্যাপক আমির হোসেনের ভাগ্নের ভর্তি কেলেঙ্কারির শাস্তি নিশ্চিত করা, ভর্তি সংক্রান্ত কাজ থেকে বিরত রাখা, অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের বিরুদ্ধে ‘কালো’ পুস্তকে আনীত অভিযোগের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,‘থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে, উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনের আসল রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। উপাচার্যকে অমূলক অভিযোগে পদ থেকে সরিয়ে অধ্যাপক আমির হোসেন নিজে অথবা তার কোনো গুরুজনকে উপাচার্য বানাতে চান।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ২০১৮ সালে প্রশাসনের কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থেকে অসহযোগীতামূলক আচরণ শুরু করেন। প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কাজের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অনুপস্থিত থাকা ও বুধবারের (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রশাসন আন্দোলনকারীদের বৈঠক বর্জন করে সমঝোতার পথ জটিল করেছেন অধ্যাপক আমির।

এর আগে ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষে নিজের ভাগ্নেকে অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড় রয়েছে।’ তিনিই ফোনালাপ ষড়যন্ত্রের মূল হোতা বলে অভিযোগ তোলে সংগঠনটি।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘প্রশ্নপত্র জালিয়াতির অভিযোগটি তৎকালীন বিএনপিপন্থী উপাচার্য (অধ্যাপক) মুস্তাহিদুর রহমানের রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিলো। এটি মিমাংসিত বিষয়। কিন্তু হটাৎ করে কেন এসময় এটি আলোচনায় আনা হলো তা চিন্তার বিষয়। বুধবার প্রশাসনপন্থি শিক্ষকদের একটা মিটিং হয়েছে। সেখানে তারা একটি উইকেট ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপাচার্যের যদি পদত্যাগ হয় তাহলে যেন আমি কোনো পদে আসীন হতে না পারি সেজন্য তারা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এছাড়া আমি যদি দুর্নীতিবাজ হই অধ্যাপক ফারজানা আমাকে প্রো-ভিসি বানিয়েছে দুই বছর হলো এতদিন কেনো অভিযোগ আসেনি।'

প্রশাসন-আন্দোলনকারীদের বৈঠক বর্জন করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আগেই রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি অবহিত করেছিলাম। আমার মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ক্ষেত্রে প্রশাসনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। বুধবারের আলোচনা বর্জন করায় উপাচার্য আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। যেটি তার এখতিয়ারভুক্ত নয়।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘বৈঠকে না আসলে আমি শোকজ করতেই পারি। এ শোকজ হচ্ছে তিনি কেনো বৈঠকে উপস্থিত থাকেন নি এ নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি তার কর্তব্য পালন না করলে আমি অবশ্যই জানতে চাইতে পারি।


সর্বশেষ সংবাদ