বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি উদ্ধার করে বিপাকে চবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী

  © ফাইল ফটো

দুই মাস বেতন বন্ধ, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা পাচ্ছি না, দেশপ্রেম আমার জন্য কাল হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকে নিজের কাজ মনে করেই করেছি। সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের মত একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নিজের নিরাপত্তাও হারিয়েছি। কিন্তু উপাচার্যের পালাবদলে সবকিছুই যেন পাল্টে গেছে। গত ১৬ জুন আমার অফিস ভাংচুরের পর আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ আমার পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা উল্টো আমার বেতন বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবেই বলছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরের মাথায় ২০১৫ সালে সর্বপ্রথম সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ হাতে নেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। এর দায়িত্বে ছিলেন সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ কমিটির সদস্য ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান। তিনি ১৯৯৪ সালের পর থেকে দীর্ঘ ২৬ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন।

সাধারণত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সীমানা নির্ধারণ করা হলেও সর্বাধিক সঠিক তথ্যের জন্য জিওগ্রাফিকাল ইনফরমেশন সিস্টেম ও উন্নত প্রযুক্তির সহযোগিতা নেন তিনি। মাহফুজুর রহমান জানান, এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওগ্রাফিকাল ইনফরমেশন সিস্টেমের উপর একটি প্রশিক্ষণের জন্য আমাকে পাঠানো হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের একটি অমীমাংসিত ইস্যু তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ ভূমির পরিমানের সঠিক তথ্য না থাকলেও এই পদ্ধতিতে তিনি ভূমির মূল পরিমাপ বের করতে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে দখলকৃত অনেক জায়গা বের করে এনেছেন।

সেই অনুযায়ী সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজেও নেমে পড়েন তিনি। এসবই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকজনের দখলকৃত জায়গা বেরিয়ে আসে। দু-একজন বিষয়টি মেনে নিলেও অনেক দখলদার সেটা মেনে নিতে পারেননি। ফলে নানান বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানকে। কখনো মামলা আবার কখনো হুমকির শিকার হয়েছেন তিনি। যদিও মামলার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত হওয়ায় সেটি কতৃপক্ষ তদারকি করছেন।

এদিকে সীমানাপ্রচীর নির্মাণে বাধা প্রদানকারী একটি পক্ষ সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার দুইদিন পর গত ১৬ জুন প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের নামফলক ও অফিসে ভাংচুর চালানোর পর দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়। সে সময় তিনি কক্ষে না থাকায় মুঠোফোনে হুমকি প্রদান করা হয়। বিষয়টি তিনি তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী ও রেজিস্ট্রারকে অবহিত করেন। যদিও প্রক্টরের মেয়াদ ১৮ জুন শেষ হয়ে যায়। এরপর নিরাপত্তাজনিত কারনে তিনি ক্যাম্পাসের বাহিরে অবস্থান করেন।

এর নয়দিন পর ২৫ জুন রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠিতে পুনরায় নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরেন। এর কিছুদিন পরেই প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণ দর্শাতে বলা হয়। এর কয়েকদিনের মধ্যে পূর্বের ঘটনাবলীর বিবরণসহ মাহফুজুর রহমান কারণ দর্শালেও উত্তর সন্তোষজনক নয়, এই মর্মে জুলাই মাস থেকে তাঁর বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের অভিযোগ, বর্তমান চাকসু কেন্দ্রের ডেপুটি রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা জাকির আহমেদ ও তার ছেলে সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বেই এসব ঘটনা ঘটছে। কারণ, সীমানাপ্রচীর নির্মাণকালে জাকির আহমেদের দখলকৃত একটি প্লটের বাউন্ডারি কাটা পড়ে। যদিও সে সময় জাকির আহমেদ নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। পরে সীমানাপ্রচীর নির্মানে বাধা প্রদান করায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বর্তমানে তিনি চাকসুর ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে ওএসডি অবস্থায় আছেন।

এদিকে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য চাকসুর ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির আহমেদ এর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, সীমানাপ্রচীর নির্মাণের মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে আমি করেছি। বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আমাকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, সাবেক উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে একটি পক্ষ তাদের ক্ষোভ মেটানোর চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ আমার পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা উল্টো অফিস না করার কারণ দেখিয়ে আমার বেতন বন্ধ করে দিয়েছে কোনো প্রকার পূর্বনোটিশ ছাড়া।

প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের বেতন বন্ধ এবং কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমেদ বলেন, কতৃপক্ষের নির্দেশেই বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। উনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ