ছাত্রলীগ নেতার মারধর, আলোচনা প্রত্যাখান আন্দোলনকারীদের

মারধরকারী সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মন্ডল
মারধরকারী সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মন্ডল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) চলমান দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের এক কর্মীকে মারধোর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা। প্রতিক্রিয়াই প্রশাসনের সাথে পূর্বঘোষিত শনিবারের আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এসময় নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা।

‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর অন্যতম কর্মী ও সংগঠক এবং জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাইমুমকে শনিবার সকাল দশটায় শহীদ রফিক-জাব্বার হল সংলগ্ন দোকানে খাবার সময় মারধর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মন্ডল।

ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক আহত নুরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪তম ব্যাচের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর এক আবেদনপত্রে শারীরিক লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তি চেয়ে বিচার দাবি করেন।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা অভিষেক মণ্ডল বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৭ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকাল শেষ করেন। কিন্তু তিনি এখনো অবৈধভাবে শহীদ রফিক-জাব্বার হলে থাকেন।

এর আগে ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক কর্মী জিয়াউল হককে মারধর করেন তিনি। জিয়াউল হক নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থী ছিলেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি অভিযোগের বিচারবিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ বিগত দুই সপ্তাহব্যাপী ক্যাম্পাসে আন্দোলন করে আসছে। এ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন মারধরের শিকার নুরুল ইসলাম সাইমুম।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০ টার দিকে সাইমুম ইসলাম শহীদ রফিক জব্বার হলের সামনে খাবারে দোকানে নাস্তা করতে যান। এ সময় পাশের সিটে বসা ছিলেন অভিষেক মন্ডল। নাস্তারত অবস্থায় সাইমুমের মুঠোফোন একটি কল আসে। সে কলটি রিসিভ করে কথা বলতে থাকলে অভিষেক মন্ডল ধমক দিয়ে তাকে আস্তে কথা বলতে বলেন ও সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। পরে সাইমুম স্থান ত্যাগে অস্বীকৃতি জানালে তাকে কলার ধরে দোকানের বাহিরে বের করে লাকড়ি দিয়ে মারধর করে অভিষেক মন্ডল।

মারধরের বিষয়ে নির্যাতিত সাইমুম ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সকালের নাস্তা করার জন্য আমি দোকানে যাই। দোকানে নাস্তা নেওয়ার সময় আমার একটি জরুরি ফোন আসে। সঙ্গত কারণেই আমি কথা বলা শুরু করি। এসময় ছাত্রলীগের নেতা ও অবৈধ ছাত্র অভিষেক মন্ডল আমার কলার ধরে দোকানের বাহিরে এনে লাকড়ি দিয়ে মারধর করে, আমি এর উপযুক্ত বিচার দাবি করি, এর আগেও সে একজন ছাত্রকে মারধোর করেছে।’

মারধরের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অভিষেক মন্ডল বলেন, ‘আমার বন্ধুকে সাথে নিয়ে দোকানে নাস্তা করতে গিয়েছি। সেখানে অনেক সিট ফাঁকা ছিল কিন্তু সাইমুম গা ঘেঁষে আমাদের পাশে বসে। এ সময় তার ফোনে কল আসলে সে উচ্চ স্বরে কথা বলতে থাকে। পরে আমি তাকে একটু ধমক দিয়ে কথা বলি। তারপর সে আমার সাথে বেয়াদবি করলে একটু হাতাহাতি হয়। মারামারির কোন ঘটনা ঘটে নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি এ ব্যাপারে বিস্তারিত যেনে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার হবে।

অন্যদিকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এ ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাই। গত তিনদিনের টানা অবরোধ শেষে আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনায় বসার কথা ছিল। কিন্তু নির্যাতনকারী অবৈধ ছাত্রনেতার উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত না করে কোন প্রকার আলোচনা প্রশাসনের সাথে হবে না বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর নেতৃস্থানীয়রা।

উল্লেখ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ জাতীয় গণমাধ্যম গুলোতে প্রকাশ পেলে এ আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। গত সপ্তাহে তারা অন্ততপক্ষে ৪টি বিক্ষোভ মিছিল, একটি মশাল মিছিল, একটি গানের মিছিল ও টানা তিনদিন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রাখে।


সর্বশেষ সংবাদ