১৪ বছরেও সরলো না জবির লেগুনা স্ট্যান্ড

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ফটক ও কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা লেগুনা স্ট্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর অতিবাহিত হলেও তা সরাতে পারেনি প্রশাসন। ফলে সহসাই বাহাদুর শাহ এবং লেগুনা স্ট্যান্ড সরানো নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দ্বিতীয় গেট বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি রিকশা মেরামতের গ্যারেজও।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার একাংশ দখলে থাকায় ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়। ফটকের সামনেও এলোপাতাড়িভাবে লেগুনা ও রিকশা রাখার কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এমনকি রেহাই পান না সাধারণ পথচারীরাও। দিন-রাত মিলিয়ে বাহদুর শাহ পরিবহনের ডজনখানেক মিনিবাস ও মহানগর পরিবহনের লেগুনা চলাচল করছে। এছাড়াও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পকেট গেটের সামনেও বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানেই চলছে বাস টিকেট বিক্রি ও যাত্রী উঠানো।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের যোগসাজশে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে গ্যারেজ ও স্ট্যান্ড। যা নষ্ট করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। প্রধান ফটক সংলগ্ন ফুটপাতে রিকশা গ্যারেজে কাজ করা রায়হান বলেন, আগে ছাত্রী হলের (শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল) পরিত্যক্ত জায়গায় গাড়ি রাখতাম। কিন্তু ওখানে নির্মাণ কাজ চলায় এখানে আসছি। রাতে এখানেই রিকশা থাকে, আমি আমার ভাইয়ের সাথে ছাত্রদের হলে (সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল) থাকি।

স্ট্যান্ডে থাকা একটি রিকশার চালক লিটন জানান, তিনি যে রিকশা চালান তার মালিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ফরিদ আহমদ। তার ৮টা রিকশা এখানেই থাকে। উনার রিকশাই ভাড়ায় চালাই, মাঝে মাঝে মেরামতেরও কাজ করি। এছাড়া ফুটপাতের একপাশে কয়েক দশক ধরে স্থায়ী দোকান দিয়েছে ইঞ্জিন মেকানিক্স ও গাড়ির সরঞ্জামাদির দোকান।

এ অংশের রাস্তায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক বন্ধ করে বেশ কয়েক বছর ধরে স্ট্যান্ড চালাচ্ছেন মিনিবাস ও লেগুনার মালিকরা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন একাডেমিক ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের জন্য ফটকটি তারাই বন্ধ রেখেছেন। ফুটপাতের এসব দখলদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে দখলকে অপরাধ নয়, বরং উত্তরাধিকার হিসেবেই দেখেন তারা।

ফুটপাতে দোকান বসানোর কারণ জানতেই তাদের কয়েকজনের ঝটপট উত্তর আমার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ছিলেন, উনার ছেলে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চাচা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। এজন্য এখানে দোকান চালাতেও তাদের কোনো ঝক্কি ঝামেলা হয় না। জাকির হোসেন নামের এক দোকানি বলেন, এখানে আছি ১০-১২ বছর ধরে। কেউ কিছু বলে না, কাউকে দু’পয়সা দিতে হয় না। এক-দুইবার পুলিশ আসে, তখন দোকান বন্ধ রাখি। তারপর আবার চালাই।

আরেক দোকানদার হাসিবুল ইসলাম জানান, তার বাবা ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কর্মচারী। তখন থেকেই তার দোকান।

বিষয়টি নিয়ে জবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মিজান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়েও একটু দম ফেলার জায়গা নেই। এখন তো ফুটপাতেও হাঁটা যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গ্যারেজ’ ও স্ট্যান্ড’ এর বিষয়ে প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা কয়েকবার তাদেরকে উঠিয়ে দিয়েছি, তাদেরকে স্থায়ীভাবে সরানোর জন্য চেষ্টা চলছে।