‘বঙ্গবন্ধুর হাতেই বাঙালির হাজার বছরের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ  © টিডিসি ফটো

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি সত্ত্বার শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি। বাংলা ও বাঙালির মুক্তির প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু নিজেকে এমনভাবে একাত্ম বা উৎসর্গ করেছিলেন, যেমনটি পূর্বে আর কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ বাঙালির স্বতন্ত্র জাতিসত্তার সর্বোচ্চ রাজনৈতিক রূপ। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাঙালি জাতির জনক ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি। কিন্তু তাঁর এ অমর কীর্তি ও সৃষ্টির জন্য সর্বাগ্রে তাঁকে হতে হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। অন্যভাবে, চিন্তা-চেতনা, গঠনে, মননে, অনুভবে, আন্দোলন-সংগ্রামে ও লক্ষ্যে তিনি হয়েছেন বাঙালি সত্ত্বার দিশারী। তাঁর হাত ধরেই ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালির হাজার বছরের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ হয়।’

আজ মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল লেকচার ২০১৯’ অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর বাঙালি সত্ত্বার’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন উপাচার্য। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মেজবাহ-উস-সালেহীন।

প্রফেসর হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘১৯৭১ কেবল ২৪ বছরের আন্দোলনের ফসল নয়। এর শেকড় আরও পেছনে। হাজার বছরের বাঙালি কৃষ্টি-কালচার, ভাষা, সংগ্রাম এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাঙালির স্বাধীনতার জন্য বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য, আন্দোলন সংগ্রাম স্বপ্ন, ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য বা ভূ-প্রকৃতি, বাঙালির মানস, ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, কৃষ্টি, শিল্প, লোকাচার, অন্য কথায় যা কিছু নিয়ে বাঙালি সত্তা-স্বকীয়তা তার সবকিছু বঙ্গবন্ধুকে মনেপ্রাণে, চিন্তা-চেতনায় ও আন্দোলন-সংগ্রামে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হয়েছে।’

উপাচার্য বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় অর্জন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে এসে নতুন রাষ্ট্রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন বটে, কিন্তু বেশিদিন আর তাঁকে বেঁচে থাকতে দেয়া হয়নি।’

‘মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত দেশী-বিদেশী মহল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে স্নায়ু যুদ্ধকালীন বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। এদেরই গভীর ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বাঙালি নামধারী কিছু জাতিদ্রোহী, রাষ্ট্রদ্রোহী কুলাঙ্গার ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর জীবন কেড়ে নেয় বটে, তবে যে বাংলার মাটি ও মানুষের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করেছেন, শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন, তারা কৃতজ্ঞতাভরে তাঁকে যথাযথ মর্যাদায় বুকে ধারণ করে রেখেছে। তাই পাকিস্তানের মাটিতে নয়, বঙ্গবন্ধু তাঁর মাতৃসম জন্মভূমি টুঙ্গিপাড়ার মাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন, যেটি ছিল বঙ্গবন্ধুর অন্তিম ইচ্ছা। জাতির জনকের মৃত্যু নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিরঞ্জীব।’