সাংবাদিককে হত্যার হুমকি, দুই ছাত্রলীগ নেতার পদ স্থগিত

  © ফাইল ফটো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি ও লাঞ্চনার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো: রাইহান ওরফে জিসান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শোয়েব হাসান হিমেলের পদ স্থগিত করেছে শাখা ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার রাতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এদিকে এ ঘটনায় পৃথক দুইটি বিবৃতিতে শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা থাকায় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সহ-সভাপতি আহসান হাবীব জয় এবং কাজী নজরুল ইসলাম হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয় বড়ুয়াকে সতর্ক করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবারের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়।

পড়ুন: গুলি করব, বুলেট সাংবাদিক চেনে না: ছাত্রলীগ নেতার হুমকি

ছাত্রলীগের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ১৯ জুলাই সাংবাদিকদের সাথে ঘটনা এবং পূর্ববর্তী বিভিন্ন সময়ে দলীয় বিশৃঙ্খলার ভিত্তিতে গত ২১ জুলাই গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শোয়েব হাসান হিমেল ও সহ-সভাপতি জিসানের পদ স্থগিত করা হলো।’

শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে কেন্দ্রের নির্দেশনায় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার পদ স্থগিত এবং দুই নেতাকে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও শাখা ছাত্রলীগের কোন নেতা-কর্মী যদি সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ করে, তার দায় ছাত্রলীগ নেবে না।’

উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই বণিক বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নাজমুল সবুজকে হুমকি দেন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো: রাইহান ওরফে জিসান। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি শাখা ছাত্রলীগ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে মৌখিকভাবে জানানো হলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদক ঐ ছাত্রলীগ নেতার দায়িত্ব নেন। তার এক সপ্তাহ না যেতেই আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকালের প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বকর রায়হানকে মারতে তেড়ে আসেন শাখা ছাত্রলীগের এ নেতা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শোয়েব হাসান হিমেল গত ১০ এপ্রিল প্রেমের জের ধরে এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েই ঘটনার ধামাচাপা দেয়। এরপর গত ১৯ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হলের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এমন খবরে পেশাগত দায়িত্বের খাতিরে সেখানে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যান সাংবাদিকরা।

সেসময় ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল সাংবাদিকদের উদ্যেশ্য করে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন ও সাংবাদিকরা কেন এসেছেন বলে চিৎকার করতে থাকেন এবং সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। এসময় যুগান্তরের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তানভীর সাবিক প্রতিবাদ করলে হিমেল সাংবাদিকদের উদ্যেশ্য করে হত্যার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘গুলি করবো। বুলেট সাংবাদিক চেনে না, সাংবাদিক পাইলেই গুলি করে মারবো।’

এ ঘটনায় হত্যার হুমকি ও লাঞ্ছনার বিচারের দাবিতে গত ২১ জুলাই (রবিবার) সকালে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বরাবর স্মারকলিপি দেন সাংবাদিকরা। একইদিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

একইদিন শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং ঐ দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। আর বুধবার থেকে এ ঘটনার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে আসছে সাংবাদিকরা।