শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়

  © টিডিসি ফটো

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম ও মুক্তিযোদ্ধার একটি পরিবার গত বুধবার শিক্ষক-কর্মকর্তা,কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ এনে দিনাজপুর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন । সেখানে তারা নিয়োগে বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে এবং রাজাকারের সন্তানকে চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন ।

উক্ত অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার (১৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয় । সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে পাঠ এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মো.ফজলুল হক।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র হালদার,জনসংযোগ ও প্রকাশনার পরিচালক প্রফেসর ড. শ্রীপতি সিকদার, হিসাব শাখার পরিচালক, প্রফেসর ড. মো.শাহাদৎ হোসেন খান, আই আর টি এর পরিচালক প্রফেসর ড. মো. তারিকুল ইসলাম, প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. খালেদ হোসেন, জেনেটিক্স অ্যান্ড এনিমেল ব্রিডিং এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল গাফফার মিয়া ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ রাজিব হাসান ।

রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় হাবিপ্রবিতে শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ক বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে । সংবাদগুলো সত্য নয় এবং বিভ্রান্তিকর। এ বিষয়ে হাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হল-

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের জন্য এবার ৪টি ধাপ অনুসরণ করা হয়েছে, যা হাবিপ্রবি তথা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক অনন্য নজির। নির্বাচনে ৪টি ধাপের সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রার্থীকে নিয়োগে সুপারিশ করা হয়েছে।

এই ৪টি ধাপ হলো: (১) লিখিত পরীক্ষা (২) ভাইভা(৩) ডেমো প্রেজেন্টেশন এবং (৪) একাডেমিক রেজাল্ট। এরপরেও এসব বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ এনে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করার যড়যন্ত্র। এবং চাকুরীপ্রাপ্ত মুহিউদ্দিন নুর এর ব্যাপারে জামায়াত-শিবিরে কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তার ব্যপারে পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়েছে এবং সেই রিপোর্ট সন্তোষজনক।

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষক রমজান আলীর যৌন হয়রানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলা হয়, গত ২০/০৭/২০১৭ তারিখে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রমজান আলীর বিরুদ্ধে এম.এস. অধ্যয়নরত একজন ছাত্রী কর্তৃক মানসিক নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ আসলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির রির্পোটের ভিত্তিতে তাকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয় এবং ঐ শিক্ষককে গবেষণা তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

এছাড়া, তার চাকুরি স্থায়ীকরণের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়। তারপরও কর্তৃপক্ষ এই র্স্পশকাতর বিষয়টির গুরুত্ব অনুভব করে এবং ড. মো. রমজান আলীর স্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য মহামান্য হাইকোর্টের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত যৌন হয়রানী প্রতিরোধ কমিটিতে প্রেরন করা হয়। ইত্যেমধ্যে তদন্ত কমিটি রির্পোট প্রদান করেছেন।

কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ড. রমজান আলীকে চাকুরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। যৌন হয়রানির সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. রমজান আলীর বিষয়টি গত ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত ৪৭তম রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উত্থাপন করা হয়েছিল। সভায় বোর্ডের সম্মানিত সদস্যগণ সবকিছু পর্যালোচনা করে, মহামান্য আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা থাকায়, সেই মামলা নিস্পত্তির পরে তার বিষয়ে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়ার মতামত দেন।

কোটায় নিয়োগ না নেওয়ার অভিযোগের প্রত্যুত্তরে লিখিত জবাবে বলা হয়, সরকারি পরিপত্র অনুযায়ি (স্মারক নং ০৫.০০.০০০০.১৭০.১১.০৭.১৮.২৭৬ তারিখ ০৪ অক্টোবর, ২০১৮) প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য কোন কোটা না থাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকুরীতে তাদের জন্য কোন কোটা রাখা সম্ভব হয়নি।

পদ বৃদ্ধি প্রসংগে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে পদ-এর অনুমোদনের ভিত্তিতে পদের সংখ্যা বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত পদের সংখ্যা থেকে সামান্য কম বেশী হতে পারে। যা অতীতে একাধিকবার হয়েছে।

নিয়োগের সিলেকশন বোর্ডে প্রশাসনের পছন্দ মতো লোক রাখা হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে,রেজিস্ট্রার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা.মো.ফজলুল হক জানান, সিলেকশন বোর্ডে যাকে ইচ্ছে তাকে রাখার নিয়ম নেই । সিলেকশন বোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন নির্ধারিত দুই জন ব্যাক্তি(বহিরাগত) ,রিজেন্ট বোর্ড এর সদস্যদের মধ্য থেকে দুই জন ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়াম্যান শুধুমাত্র থাকতে পারে ।

জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ নিয়ে মুহিউদ্দিন নুর জানান, দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি । দীর্ঘ এই সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিক সমিতি ও ক্যারিয়ার ক্লাব সহ কয়েকটি সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সাংবাদিকতা করার সময় আমি কিছু সত্য জিনিস তুলে ধরেছিলাম। যা তাদের পছন্দ হয়নি,এরই জের ধরেই তারা অনৈতিক ভাবে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করে যাচ্ছেন । সে সময় তাদের কেউ তখন জামাত-শিবির করার অভিযোগ নিয়ে আসেনি ।

আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লানিং এন্ড ডেপলোপমেন্ট অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছি তো বিভিন্ন মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে । অথচ এই নিয়োগের পুর্বে আমার পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে । সেখানে পুলিশ প্রশাসন কোন অভিযোগ পায়নি এরপরেও যারা অভিযোগ নিয়ে আসছে আমি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম তারা এর কোন প্রমাণ দিতে পারবে না। উনাদের সম্ভবত পুলিশ প্রশাসনের ওপর ভরসা নেই তাই এসব বলছেন।

তবে আজকের পর রাজাকার শব্দ বা মিথ্যাচার হলে আমি আইনানুগ ব্যবস্থ নিবো । কিন্তু যারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যে অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে তাদের মধ্যেই হত্যা মামলার আসামী এবং জামায়াত-বিএনপির ঘনিষ্ট লোকজন রয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন মুহিউদ্দিন নুর , এবং তার প্রমাণও রয়েছে বলে জানান তিনি ।


সর্বশেষ সংবাদ