জাবি সিনেটে ভিসিপন্থীদের ভরাডুবি, একাংশকে দায়ী করলো অন্যরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সিনেটের অধ্যক্ষ ক্যাটাগরিতে একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত ৫টি পদের বিপরীতে মাত্র একটি পদে জয় পেয়েছে ভিসিপন্থী শিক্ষকদের জোট বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের মনোনীত সদস্যরা। ভিসি বিরোধী শিক্ষকদের জোট থেকে মনোনীত প্রার্থীরা জিতেছেন ৪টি পদে।

নির্বাচনে এ ভরাডুবির পেছনে ভিসিপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ অন্য একটি অংশকে দায়ী করছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। এছাড়াও অধ্যক্ষ ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেটে ২টি পদের নির্বাচনে ১টি করে পদে নির্বাচিত হয়েছেন উভয় জোটের মনোনীত প্রার্থীরা।

গত সোমবার একডেমিক কাউন্সিলের ১৩৫ তম সভার ১৬ ও ১৭ নং আলোচ্যসূচির কার্যক্রম হিসেবে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডেকেট সভায় নির্বাচনের মাধ্যমে মনোনীত সদস্যদের স্ব স্ব পর্ষদে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ।

নির্বাচন নিয়ে স্বভাবিকভাবেই ক্যাম্পাসে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অধিকাংশ আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ভিসির সাথে একজোট হওয়ার পরও ভিসিপন্থীদের ভরাডুবি শিক্ষক রাজনীতিতে চ্যাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেক শিক্ষকদের ধারণা- আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি গ্রুপ ভিসিকে সমর্থন দিলেও ভোট দেয়নি। অনেক ভিসিপন্থী শিক্ষক সরাসরি দায়ী করেছেন তাদেরই একটি পক্ষকে। ফলে নির্বাচনে পরাজয়ের পর উপাচার্যের আস্থার সংকটে রয়েছে ভিসি পন্থী শিক্ষকদের উক্ত অংশ। এ অংশের অনেক শিক্ষক পূর্বে ভিসি বিরোধী জোট ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজে’র নেতৃত্ব স্থানীয় পদে আসীন ছিলেন। এ অংশের প্রধান হলেন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। তিনি ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’র আহবায়ক ছিলেন। গত এপ্রিল মাসে তিনি ভিসি বিরোধী শিক্ষকদের বিরাট একটি অংশ নিয়ে ভিসি পন্থী শিক্ষকদের জোটে যোগদান করেন।

ভিসি পন্থী অনেক শিক্ষকের দাবি, দলবদল করে সদ্য ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ এ যোগদান করা এ সকল শিক্ষকরা তাদের পূর্বের দলের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেছেন। তাদের দাবি দল পরিবর্তন করা ওই গ্রুপের নেতা অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও তার অনুসারী শিক্ষদের অনেকে তাদের পূর্বের দল ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজে’র মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন বলেই আজ এই ভরাডুবি। ভিসিপন্থী শিক্ষকদের একীভূত হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে আবারো ভিসিপন্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এ নির্বাচন ভিসি পন্থী শিক্ষক রাজনীতিতে ‘সন্দেহের কাদা’ ছোড়াছুড়ির আলোচনা শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে ভিসি পন্থী শিক্ষক অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার বলেন, ‘আমরা যারা আগে থেকে উপাচার্যের সাথে ছিলাম তাদের সাথে সদ্য যোগ দেওয়া শিক্ষকদের মধ্যে বিশ্বাসের অবশ্যই ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতির কারণেই হয়ত নির্বাচনে আমাদের ভরাডুবি হয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে উপাচার্য যদি এখন থেকে সচেতন না হন তাহলে অদূর ভবিষতে তাকে আরও বেশী ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে’।

এবিষয়ে জানতে চাইলে দল পরিবর্তন করা ভিসিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘যে সব শিক্ষকরা এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন তারা আসলে নিজেদের দূরাবস্থা ঢাকতে চাচ্ছেন। আমাদের মধ্যে কোন বিশ্বাস-যোগ্যতার ঘাটতি নেই’। এদিকে ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’র সদস্য অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘যেসকল শিকক্ষক আমাদের সাথে প্রতারণা করে উপাচার্যের দলে যোগ দিয়েছেন তারা যে উপাচার্যের সাথে প্রতারণা করবেন না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাদের প্রতারণার ফল উপাচার্য এখন নিজেই প্রত্যক্ষ করেছেন’।

এর আগে একাডেমিক কাউন্সিল, সিনেট ও সিন্ডিকেট নির্বাচনের দাবিতে আওয়ীপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এ বছরের জানুয়ারীতে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ভিসিপন্থীদের ভরাডুবি হয়। বিরোধীদের আন্দোলন আরো তীব্র হলে এপ্রিল মাসে সরকারের চাপে আন্দোলন ছেড়ে আওয়ামীপন্থী অধিকাংশ শিক্ষক ভিসিকে সমর্থন দেন। তবে ভিসি বিরোধী ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ এর নেতারা বলছেন, উপাচার্যের ‘অনৈতিক ও নানা অনিয়মের’ প্রতিবাদে সচেতন শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তাদের সঠিক রায় দিয়েছেন। নির্বাচনে জয় লাভ করার পর সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। একই সাথে উপাচার্যকে স্বৈরাচারীতা পরিহার করে গণতান্ত্রিক উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে আহ্বান জানান।

ভিসিবিরোধী জোটের সদস্য সচিব অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, ‘আমাদের জোট বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে আসছে। এই নির্বাচনে বিজয় আমাদের সামনের দিনগুলোতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে প্রেরণা যোগাবে’।

ভিসিবিরোধী জোট থেকে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ (ঢাকা কলেজ)। সিনেটর হয়েছেন অধ্যাপক বেদৌরা বিন্তে হাবীব (নারায়নগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজ), অধ্যাপক মো. ইসমাইল হোসেন (সরকারী তেলিগাতী কলেজ, নেত্রকোণা), অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম (টঙ্গী সরকারী কলেজ, গাজীপুর), অধ্যাপক গোলসান আরা বেগম (আর.এস. আইডিয়েল কলেজ, কিশোরগঞ্জ) অন্যদিকে নির্বাচেন ভিসিপন্থীদের ব্যানার থেকে সিন্ডেকেট সদস্য হয়েছেন অধ্যক্ষ শেখ জুলহাস উদ্দীন (সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, ঢাকা), সিনেটর হয়েছেন অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান (আবদু ররউফ কলেজ, মানিকগঞ্জ)।


সর্বশেষ সংবাদ